স্বাস্থ্য

মাসিক মিস হওয়ার কতদিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

Rate this post

সাধারণত মাসিক মিস এক দুই সপ্তাহের মধ্যে ৯০ শতাংশ মহিলা, তারা গর্ভবতী কিনা সেই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই কয়েক দিনে হয়তো কিছু লক্ষণ বোঝা যায় কিন্তু মহিলাটি গর্ভবতী কিনা সেই লক্ষণ সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ পেতে ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে মাসিক মিস হলো বলেই মনে করা হবে সে গর্ভবতী এটাও কিন্তু নয়। মাসিক মিস হওয়ার পরেও গর্ভ ধারণের আরো অনেক লক্ষণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো সকালে ঘুম থেকে উঠে শারীরিক দুর্বলতা। আবার এটা কখনো কখনো রাতে হতে পারে। এতে করে নারীরা প্রচন্ড শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করে। প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ঘুরায়। বিশেষ করে শুয়ে থাকলে, শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরায়। আর বিশেষ করে সকালের দুর্বলতা টা দেখা দেয় গর্ভ ধারণ হওয়ার এক মাস পর থেকেই।

৫ থেকে ৬ সপ্তাহ পর নারীর দেহে অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর জন্য সব সময় গা গুলাতে থাকে। যার ফলে কিছুক্ষণ পর পর বমিও হতে পারে। প্রায় ৮০ শতাংশ নারী গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বমির সমস্যার সম্মুখীন হয়ে। স্তন নরম হয়ে যায়, আবার কারো কারো স্তন শক্ত হয়ে যাওয়া, স্তন ভারি অনুভব ও হতে পারে। অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। গর্ভধারণের ফলে অধিকাংশ নারীদের মুড সুইং হয়ে থাকে। হঠাৎ করে প্রচুর আনন্দে মেতে ওঠে আবার হঠাৎ করেই প্রচন্ড ভাবে রেগে যায়। অকারণে উত্তেজিত হয়ে যায়, কিছু কিছু সময় একা থাকতে খুব ভালোবাসে আবার অনেক সময় সবার সাথে মিশতে খুব ভালো বাসে।

মাঝে মাঝে খুব মাথা ব্যাথা করা মাথা ঘোরা। এরকম সমস্যা দেখা দিলে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা দরকার। অনেক নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দেয়। পিরিয়ডের তারিখ ছাড়াই হঠাৎ করে ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়। যেমন এক তারিখে পিরিয়ড হয় সেখানে ১৫ তারিখে হয়ে যাচ্ছে। অথবা ১০ তারিখে আবার এমনও হতে পারে, এক তারিখের পিরিয়ড ২০ তারিখে হচ্ছে, এগুলো হচ্ছে অনিয়মিত পিরিয়ড। নিয়মিত এবং সঠিক পিরিয়ড হচ্ছে ১ তারিখে পিরিয়ড হবে। পরবর্তী মাসে ২৯, ৩০ অথবা ১ তারিখের মধ্যে হবে এটা হচ্ছে নিয়মিত এবং সঠিক পিরিয়ড। এরকম হলে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা দরকার।

সহবাসের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হয়?

কোন নারী পুরুষ সহবাসের পর, সেই মহিলার পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণে যদি মনে হয় সে প্রেগন্যান্ট তাহলে তার প্রেগন্যান্ট পরীক্ষা করার সঠিক সময় হল: ওই মহিলার এক তারিখের পিরিয়ড হইছে পরবর্তী মাসের ১ তারিখ পার হয়ে ১০-১৫ তারিখ চলে গেছে। তখন তার প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা দরকার। অনেকেই কয়েক দিনে বোঝা যায় না তাদের আরো পাঁচ দশ দিন অপেক্ষা করতে হয় তারপরে সঠিক আসে। পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে সে গর্ভবতী কিনা তার মধ্যে কোন রকম কোন গর্ভবতীর লক্ষণ প্রকাশ পায় না বললেই চলে। পিরিয়ড মিস হওয়ার কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন পর প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে হয়। যদি প্রথম বার নেগেটিভ আসার পরেও পিরিয়ড না হয়, তাহলে পিরিয়ড মিস হওয়ার ১৫ দিন মানে তার পাঁচ দিন পর আবার প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উচিত।

যেভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করবেন

আপনার পিরিয়ড যদি নিয়মিত হয় বা প্রতি মাসে একটু পিছিয়ে যায়, তাহলে পিরিয়ডের শেষ দিন থেকে ৩৫-৪০দিন অপেক্ষা করার পর প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করুন। প্রত্যেকটা মানুষের রাতে ঘুমানোর পর সকাল বেলা ইউরিন অনেক বেশি ঘনীভ্রত অবস্থায় থাকে যার কারনে ইউরিনে অনেক বেশি HCG হরমোনের উপস্থিতি অনেক ভালো ভাবে বোঝা যায়। তাই প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করার জন্য সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথম ইউরিন দিয়ে পরীক্ষা করলে সঠিক রিপোর্ট আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু পিরিয়ডের সময় আসার আগেই যদি আপনি প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করেন, অথবা অনেক বেশি পানি পান করে পরীক্ষা করেন তাহলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অনেক নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেয়ে থাকেন, উপযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়ার ফলেও অনেক নারীর গর্ভে সন্তান চলে আসে। তাই পিরিয়ড মিস হলে অথবা উপরোক্ত প্রেগনেন্সি লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই কোন ঝুঁকি না নিয়ে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করে নেওয়াই ভালো। ৮০% মহিলাদের লক্ষণ প্রকাশ পেতে প্রায় চার মাস সময় লেগে যায়। তবে মাসিক মিস হওয়ার ২ সপ্তাহ পরই স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করলে প্রেগনেন্সি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। গর্ভবতী কিনা এটা জানার সব থেকে বড় মাধ্যম হলো ইউরিন পরীক্ষা করার মাধ্যম। স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করলে অনেক সময় ভুল ফলাফল আসে।

মাসিক মিস হওয়া মানেই কি গর্ভবতী?

মাসিক মিস হলো বলেই যে সে গর্ভবতী এরকম কিন্তু নয়। অনেক সময় অকারনেই মাসিক বন্ধ হতে পারে, আবার সেটা অনিয়মিত ভাবে চালু হতে পারে। তবে সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয় গর্ভবতী হওয়ার কারণে। মাসিক বন্ধ হলে বাড়িতে ইউরিন টেস্ট করতে পারেন অথবা ডাক্তারের কাছে গিয়ে করতে পারেন তাতে খুব সহজেই নিশ্চিত হতে পারবেন। প্রাথমিক ভাবে স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করলে যদি পজিটিভ ফলাফল না আসে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন তাতে সঠিক ফলাফল আসবে।

মাসিক মিস হওয়ার যতদিন পর নারীরা গর্ভবতী হয়

প্রত্যেক নারীর প্রত্যেক মাসে একবার করে অবুলেশনের সময় চলে আসে। আর এই অভুলেশনের সময় একটা নারীর গর্ভধারণের সময় চলে আসে। যেসব মহিলারা গর্ভবতী হতে চাচ্ছেন কিন্তু হচ্ছে না, তাদের মনে রাখতে হবে কখন তাদের অবুলেশন হচ্ছে। ভালো করে মনে রাখতে হবে কোন সময় আপনার অবুলেশন হয়। কারণ এই সময়টা হচ্ছে গর্ভধারণের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। যে সময়ে নারীদের গর্ভবতী হওয়ার সুযোগ সব থেকে বেশি থাকে। তবে অবুলেশন এর আগে আপনার জানতে হবে আপনার মাসিকের সময়টা। জানতে হবে আপনার মাসিক সার্কেল কত দিনে যাকে মাসিক চক্র বলা হয়। আপনার মাসিক টা কত দিনের সব থেকে আগে আপনি এটা জানতে হবে ও বুঝতে হবে।

এই মাসিক সার্কেলটা একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে কারো ২৮, দিনে কারো ৩০ দিনে আবার কারো কারো ৩২ দিনেও হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু মহিলা আছে তাদের মাসিক চক্র ২৪ অথবা ২৫ দিনেও হয়ে থাকে। যাদের মাসিক চক্র নিয়মিত তাদের অবুলেশন হয় নিয়মিত মানে প্রত্যেক মাসে। অভুলেশনের সময় যদি সহবাস করা যায় তাহলেই গর্ভবতী হতে পারবেন। আর যাদের মাসিক চক্র ঠিক নেই যেমন এক তারিখে হচ্ছে আবার ১৫ তারিখে হচ্ছে আবার দেখা যাচ্ছে এক মাসে দুইবার হচ্ছে। এগুলোকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয় যাদের অনিয়মিত মাসিক তাদের জন্য অনিয়মিত তাই তাদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়াটা খুব কঠিন বিষয়। এরকম সমস্যা যাদের তাদের অবুলেশন সঠিক না। আর অবুলেশন সঠিক না হলে বাচ্চা কনসিভ হবে না। যেমন ধরেন যদি আপনার মাসিক চক্র যদি ২৮ দিনে হয় তাহলে সেটাকে ২৮ দিনের মাসিক চক্র বলা হয়। আপনার মাসিক যদি ২৮ তারিখে হয় তাহলে যেদিন মাসিক অর্থাৎ ২৮ তারিখে যদি মাসিক শুরু হয় তাহলে সেদিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত আপনাকে গুনে গুনে রাখতে হবে অর্থাৎ ২৮ তারিখে যদি শুরু হয় তাহলে ১৪ দিন হলে কয় তারিখ পড়তেছে সেটা আপনাকে বের করতে হবে। কারো মাসিক চক্র যদি ১ তারিখে হয় তাহলে তাহলে অবুলেশন হবে ১৪,১৫,১৬,১৭,১৮ এই পাঁচ দিনে।

এই পাঁচদিনে আপনার অবুলেশন হবে আর এই পাঁচ দিনে যদি আপনি সহবাস করেন তাহলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যখন অবুলেশনের সময় আসে তখন একটি মহিলার ডিম্বাশয়ে থাকা একটি ডিম পরিপক্ক হয়ে টিউবের মধ্যে এসে অপেক্ষা করতে থাকে স্পামের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য। যখন কোন স্প্যাম ডিম্বানুর সাথে মিলিত হবে তখনই মহিলা গর্ভবতী হতে পারবেন। আর যদি সময় মতো কাজটি না হয় তাহলে ডিমটি নষ্ট হয়ে পিরিয়ডের সাথে বেরিয়ে যাবে আপনার মাসিক সময় যেদিনই হোক না কেন তারপর থেকে ১৪ দিন হিসাব করে বের করে অবুলেশনের সময় বের করতে হবে। আর সেই সময় মেলামেশা করতে হবে কারণ এটাই হচ্ছে গর্ভধারণের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।
Back to top button