স্বাস্থ্য

মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

মেয়েদের জীবনে মাসিক এর প্রভাব অপরিসীম। প্রত্যেকটা মেয়ের‌ই প্রতি মাসে মাসিক হয়ে থাকে।মে মেয়ের মাসিক হয় না সে মেয়ে কখনো মা হতে পারে না। তাই কোন মাসে যদি মাসিক বন্ধ যায়, তখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মাসিক হওয়া সন্তান হ‌ওয়া না হওয়ার উপর নির্ভর করে। মাসিক না হওয়ার একটি কারণ হলো অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের কারনে। শরীরের উচ্চতার সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এই অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের কারনে মাসিক অনিয়মিত হয়। যেসব মেয়েদের অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের কারনে অনিয়মিত মাসিক হয়, তাদের স্বাস্থ্য কমানো দরকার। যে খাবার খেলে স্বাস্থ্য এর উন্নতি হয় সে ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত তেলের খাবার খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মে খাবার গুলো অতিরিক্ত তেল দিয়ে বানানো সেই খাবার গুলো পরিহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তবে কয়েক দিন ব্যায়াম করার পর যদি ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলে হয়তো স্বাস্থ্যের অবনতি হবে না। তাই স্বাস্থ্য কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে কারন শরীর চর্চা শরীরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য কমিয়ে দেয় এবং শরীরকে ফিট রাখে।

মাসিক নিয়মিত করার জন্য প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি খেতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। যে ধরনের খাবারে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের মাত্রা বেশি পাওয়া যায় সে ধরনের খাবার বেশি করে খাওয়া। কারন ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের অভাবে ও মেয়েদের মাসিক বন্ধ থাকে। বেশি করে তাজা মাছ, মাংস খেতে হবে এবং বেশি বেশি ফলমূল খেতে হবে। শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে ইউরেটরে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। এতে করে মাসিক হতে বিলম্ব করে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। দৈনিক ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার আরেকটি খাবার হচ্ছে টক জাতীয় ফল। টক জাতীয় কিছু ফল আছে যেগুলো খেলে মাসিক নিয়মিত হতে পারে এবং কি সম্ভাবনা রয়েছে।

  • ফলগুলোর মধ্যে যেগুলো খাবেন সেগুলো হচ্ছে, মালটা, জলপাই,‌আমড়া।
  • প্রতিদিন দুটো করে মালটা নিয়মিত খেলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়
  • প্রতিদিন তিন-চারটা করে জলপাই খেলে দু-এক মাসের মধ্যেই অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হবে
  • প্রতিদিন তিন-চারটা করে আমড়া নিয়মিত খেলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়।
  • টক জাতীয় ফলের মধ্যে আরেকটি উপাদান হলো তেতুল।

মাসিক নিয়মিত করতে তেতুল যেভাবে খেতে হবে

এক গ্লাস পরিষ্কার, বিশুদ্ধ পানির মধ্যে পরিমাণ মতো গুড় অথবা চিনি মিশাতে হবে। পরিমাণ মতো পাঁকা তেতুল থেকে তেতুলের বীজ ছাড়িয়ে নিতে হবে সেই ছাড়ানো অংশটুকু ওই গুড় অথবা চিনি মিশানো পানির মধ্যে এক চামচ ওই তেতুল দিতে হবে। ওই তেতুল পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর ওই পানির মধ্যে এক চামচ জিরার গুঁড়ো ও পরিমাণ মতো লবণ মেশাতে হবে। এটি প্রতিদিন দিনে দুই বার পান করতে হবে। আর নিয়মিত পান করলে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হবে।

মাসিক রেগুলার করতে গুরুত্বপূর্ণ খাবারসমূহ

নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খাওয়া মাসিকের জন্য উপকারী। নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়। যাদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে তাদের চা, কফি বা কোন সফট ড্রিংক পান করবেন না। আঙুর ফল ও মাসিক নিয়মিত করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যাদের মাসিক অনিয়মিত তারা যদি নিয়মিত আঙ্গুর ফল খান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়। অধিকাংশ নারীদের মানসিক চাপ আর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এর কারনে অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। তাই মাসিক নিয়মিত করার জন্য মানসিক চাপ আর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। শরীরে যদি হিমোগ্লোবিন কমে যায় তাহলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। হাত, পা, চোখ মুখের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বমি বমি ভাব হয়। মাথা ঘুরায় ও মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। তাই শরীরে রক্তের ঘাটতি থাকলে যে খাবার খেতে রক্তের ঘাটতি পূরণ হবে সেসব খাবার খেতে হবে। সে খাবার গুলো হলো: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে প্রাণীজ প্রোটিনের প্রয়োজন।
যেমন:

  • মাংস: যে কোন ধরনের লাল মাংস যেমন: খাসীর মাংস, হাঁসের মাংস, গরুর মাংস, বিশেষ করে কবুতরের মাংস রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই মাংস গুলো যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যায় তাহলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং রক্তশূন্যতা দূর হবে।
  • কলিজা: হাঁস, মুরগি, কবুতর ও গরুর কলিজা নিয়মিত খেলে রক্তে আয়রন বৃদ্ধি পেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়বে এবং খুব সহজেই শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পাবে।
  • রসালো ফল: আমি, জাম, আনারস, লেবু, আপেল, কমলা, মালটা, জাম্বুরা, আমড়া, পেঁয়ারা এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি আয়রনকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শোশন করে তার জন্য খুব তাড়াতাড়ি শরীরে রক্তের মাত্রা বেড়ে যায়।
  • শুকনো ফল: কিঁচমিছ ও খেঁজুর, প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টা করে খেঁজুর খেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক মুঠো কিঁচমিছ নিয়মিত খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে, এবং খাবারে অরুচি দূর করে খাবারে রুচি বাড়ায়। আবার নিয়মিত খাবারের সাথে ও কিঁচমিছ খেলে উপকৃত হ‌ওয়া রায়। কারন খেঁজুর এবং কিঁচমিছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
  • বাদাম: চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম ইত্যাদি। এই বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে।
  • ডিম: ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, প্রোটিন ও বিভিন্ন পুষ্টি গুণ। অনেক রকম পুষ্টি গুণ বিদ্দামান আছে এই ডিমে তাই প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় কম পক্ষে একটি করে ডিম রাখা জরুরি।
  • সামদ্রিক মাছ: রুই মাছ, টুনা মাছ, সালমোন মাছ, এগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে খুব সহজেই শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে। কারন সামোদ্রিক মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং আয়ডিন থাকে। এছাড়া সামোদ্রিক যে ঝিনুক, এই ঝিনুক যদি খাদ্য তালিকায় রাখা যায় তাহলে ও শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • ড্রাগন ফল ও ডালিম: ড্রাগন ফল ও ডালিম ফলে রয়েছে অনেক ধরনের উপাদান যেমন: ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের ফাইবার থাকে যা শরীরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শাক: লাল শাক, পালন শাক, কচু শাক, ব্রকলি ইত্যাদি এই শাক যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে খুব দ্রুত শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে।

মেয়েদের মাসিক নিয়মিত করতে প্রোটিন জাতীয় খাবারের তালিকা

প্রোটিন জাতীয় খাবার, প্রোটিনের অভাবে ও মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে, নিচে কয়েকটি প্রোটিন জাতীয় খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো:

  • ডিম: উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে একটি খাবার হলো ডিম। একটি ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যা প্রত্যেকটা মানুষের‌ই নিয়মিত খাওয়া উচিত। কম দামি একটি খাবার যা যে কোন মানুষ‌ই খেতে পারবে।
  • দুধ: প্রোটিনের মধ্যে দুধ হলো আদর্শ খাবার।
    দুধে আছে উচ্চ মানের প্রোটিন। যা মানব দেহের মাংস পেশীকে দূত বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।তাই প্রত্যেক টা মানুষের‌ই নিয়মিত দুধ খাওয়া দরকার।
  • অঙ্কুরিত ছোলা: ১০০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলায় ২০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া দরকার।
  • মুরগির মাংস: ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে ২৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন মুরগির মাংস খাওয়া দরকার।
  • চিনা বাদাম: ১০০ গ্রাম চিনা বাদামে ২৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই রোজ ১০০ গ্রাম সম্ভব না হলে ও ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম সম্ভব না হলে ২৫ গ্রাম করে চিনা বাদাম খাওয়া দরকার।
  • কাঠ বাদাম: ১০০ গ্রাম চিনা বাদামে ২১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ টা করে কাঠ বাদাম খাওয়া দরকার।
  • সয়াবিন: ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৫০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
    নিয়মিত না খেলে ও সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন সয়াবিন বড়ি রান্না করে খেলে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হয়।
  • ব্রকলি: নিয়মিত ব্রকলি সিদ্ধ বা রান্না করে খেলে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হয়।
  • কাজু বাদাম: ১০০ গ্রাম কাজু বাদামে ১৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ টা করে কাজু বাদাম খাওয়া দরকার।
  • ওটস: ১০০ গ্রাম ওটস এ ১৭ গ্রাম প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন ডি কমপ্লেক্স, ম্যাংগানিস, উচ্চ মানের ডায়েটটি ফাইবার পাওয়া যায়। প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এর চাহিদা পূরণ করে এই ওটস তাই নিয়মিত ওটস খাওয়া দরকার।
  • মাছ: ১০০ গ্রাম মাছে ২২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ খাওয়া দরকার।
  • মাশরুম: মাশরুমে আছে উচ্চমানের প্রোটিন ক্যালসিয়াম ও আইরন ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম সেডিনিয়াম ও জিংক যা মাংস পেশীর ক্ষয় পূরণ করতে সহায়তা করে এবং দৈহিক ওজন বৃদ্ধি করতে এবং আকর্ষণীয় ফিট চেহারা পেতে সাহায্য করে। শরীর থেকে প্রোটিনের অভাব সম্পূর্ণরূপে দূর করতে মাশরুমের তুলনা নেই।

যে সকল মেয়েদের শরীরে রক্তের ঘাটতির কারণে মাসিক অনিয়মিত হয় সে সব মেয়েরা যদি এ ধরনের খাবার নিয়মিত বেশি পরিমাণে খায় তাহলে রক্তশূন্যতা দূর হবে এবং শরীরে পরিমাণ মতো রক্ত থাকাতে মাসিক নিয়মিত হবে। এগুলো হচ্ছে ঘরোয়া উপায় মানে প্রাথমিক চিকিৎসা। আর এই প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হতে পারে।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।
Back to top button