স্বাস্থ্য

মেয়েদের মাসিকের ব্যাথা হলে কি করনীয়? সহজ উপায়

মাসিকের ব্যাথা নারিদের একটি প্রচলিত সমস্যা। কখনো কখনো এই ব্যাথা সহ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। এই ব্যাথার জন্য নারীদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ করতে ব্যাহত হয়। এ ব্যাথা এতটাই ব্যাথা অনেকে সহ্য করতে পারে না। মাসিকের ব্যাথার জন্য অনেকেই তাদের প্রয়োজনীয় কাজও করতে পারে না, পড়াশোনা করতে সমস্যা হয়। বাইরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে তারা যেতে পারে না। প্রায় মেয়েরাই এই ব্যাথার শিকার। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে নারীদের ব্যাথাটা কম থাকে। পিরিয়ডের এই ব্যাথার পিছনে কিছু কারণ বিদ্যমান । যেমন ১৫ থেকে ২৫ বয়সী নারীদের শরীর থেকে পিরিয়ডের দূষিত ব্লাড গুলো বের হতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা পায়, যা এই পেট ব্যাথার অন্যতম কারণ। নারীদের যখন প্রথম পিরিয়ড চক্র শুরু হয় তখন থেকেই তার ডিম্বাণু তৈরি হতে থাকে। এই ডিম্বাণ গুলো গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। শুক্রাণুর অনুপস্থিতিতে ডিম্বাণ গুলো ক্রমানুগত ভাবে নষ্ট হতে থাকে। এই ডিম্বাণুগুলো নষ্ট হওয়ায় ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীদের পেট ব্যথার মূল কারণ। একবার সন্তান প্রসব করার পর এই ব্যাথাটা আর থাকেনা। আবার অতিরিক্ত চিন্তা, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার কারণেও পেট ব্যাথা হয়ে থাকে। তাই মাসিক চলা কালীন সময়ে প্রত্যেক মেয়েরই উচিত কিছু নিয়ম মেনে চলা। এই নিয়ম গুলো মেনে চললে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যে সব মেয়েরা এই নিয়ম মেনে চলে না তাদের মাসিকের সময় তল পেটে ব্যাথা করে।

 গরম পানি দিয়ে গোসল করা

একটা মেয়ে যখন মাসিক চক্র শুরু হয় তখন তার তল পেটে প্রচন্ড ব্যাথা করে থাকে। আর যে কোন ব্যাথার কার্যকরী উপাদান হচ্ছে কুশুম গরম পানি। তাই গোসলের সময় অবশ্যই কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে এবং তল পেটে বেশি করে পানি ব্যবহার করতে হবে। মাসিকের সময় গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ধীরে ধীরে ব্যাথা কমতে সহায়তা করে।

গরম পানি পান করা

গরম পানি যেহেতু ব্যথা কমানোর কার্যকরী উপাদান সেহেতু মাসিক চক্র যখন শুরু হবে সেই দিন গুলোতে কুসুম গরম পানি যদি পান করা হয়। ওই গরম পানি পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে তাই মাসিক চলা কালীন সময়ে প্রত্যেকটা মেয়ের কুসুম গরম পানি পান করা উচিত।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

যখন একটি মেয়ের মাসিক চক্র শুরু হয় মানে রক্ত স্রাব হয় তখন মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্তের ঘাটতি হয় শুধু মাত্র রক্ত পড়াতে রক্তের ঘাটতে হয় না আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় তাই প্রত্যেকটা মেয়ের পুষ্টিকর খাবার ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খাওয়া দরকার। এই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারণে শরীরের রক্তশূন্যতা ও ক্যালসিয়াম, আয়রনের ঘাটতি পূরণ হবে।

কাঁচা পেঁপে খাওয়া

যে কোনো ব্যাথা কমাতে কাঁচা পেঁপের তুলনা নেই। বিশেষ করে মেয়েদের মাসিক হওয়ার পর যে ব্যথাটা করে সেটা খুব মারাত্মক ভাবে আকার ধারণ করে। তাই তখন তাদের ব্যাথা কমানোটা জরুরি হয়ে দাঁড়ায় আর সেই সময় থেকে শুরু করে যত দিন মাসিক চলবে তত দিন যদি নিয়মিত তিন বেলা কাঁচা পেঁপে খাওয়া যায় তাহলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পেঁটে ছেক দেওয়া

গরম পানির সেক যে কোনো ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। হাতের ব্যাথা, পায়ের ব্যাথা, এবং কি শরীরে যে কোন অঙ্গে ব্যাথা কমাতে গরম পানির তুলনা নেই। যে স্থানে ব্যথা করবে সেই স্থানে গরম পানি কোন কাঁচের বোতল অথবা হট ওয়াটার বোতল ভরে সেই ব্যাথার স্থানে নিলে আস্তে আস্তে ব্যাথা কমে যায়।

আদার রস

গরম পানিতে মিশে খাওয়া। ব্যাথার জন্য আদার রস খুবই কার্যকরী একটা উপাদান। শুধু পিরিয়ডের ব্যাথা না পেটে যে কোন ব্যাথা হলে আদার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে কয়েক বার খেলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অ্যালোভেরার রস ও মধু

অ্যালোভেরার রস ও মধু দিয়ে জুস তৈরি করে খাওয়া। অ্যালোভেরা থেকে অ্যালোভেরার রস বের করে তার সাথে মধু মিশিয়ে জুস তৈরি করে দিনে কয়েক বার খেলে ব্যাথা কমে যায়।

বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া

লাল শাক, পালন শাক, কচু শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, শিম, সজনে ইত্যাদি এই শাকসবজি যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে খুব দ্রুত শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে। প্রোটিন জোগায় এবং মাসিকের ব্যাথা কমাতে সহায়তা করে।

ভারী ও শক্তি দায়ক কাজ না করা

ভারী জিনিস তোলা থেকে নারীদের সব সময় বিরত থাকতে হবে। কারণ নারীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ থাকে তাদের পেঁটে।
যেমন: জড়ায়ু বা ডিম্বাশয়। তাই মাসিক হওয়া অবস্থায় নারীদের খুব ভারি জিনিস টেনে তোলা উচিত নয়। ভারি জিনিস ও শক্তিধায়ক কাজ করার ফলে নারীদের জড়াইতে আঘাত লাগে এবং তাতে অনেক মারাত্মক সমস্যা হতে পারে এবং মাসিকের সময় পেট ব্যাথা ও হয়।

ব্যায়াম

গবেষকের গবেষণা মতে জানা গেছে যে কিছু কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো মাসিকের সময় করা নিষেধ। এবং কিছু কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো মাসিক চলাকালীন সময় করা যায় যেটা শাস্তির পক্ষে ভালো এবং মাসিকের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। যেমন: যোগ ব্যায়াম যেগুলো মাসিকের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। তাই মাসিকের সময় এই ব্যায়াম করলে মাসিকের ব্যাথা কমাতে সহায়তা করবে।

প্রস্রাব আটকে রাখা

প্রস্রাব আটকে রাখার মত বদ অভ্যাসটা অনেকেরই আছেন। কারণ মাসিকের সময় বার বার প্রস্রাব করতে টয়লেটে যাওয়া অনেকের কাছেই খুবই বিরক্ত কর একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকেই প্রস্রাব আটকে রাখে বার বার প্রস্রাব করতে যাওয়ার ভয়ে। তবে এটা খুবই খারাপ একটা অভ্যাস। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই প্রস্রাব আটকে রাখার কারণে তল পেঁটে চাপ লাগে যা পেঁটের ব্যাথা বাড়াতে সহায়তা করে।

 অনেক জোরে চিৎকার করা বা উচ্চস্বরে কথা বলা

মাসিকের সময় রাগ জীদ এমনিতেই বেড়ে যায় তাই সেই রাগ জীদের কারণে অনেক বেশি চিৎকার করা করা যাবে না। চিৎকার করার জন্য শরীরের যে পেশির উপর জোর দিতে হয় তার মধ্যে পেঁটের পেশিও আছে। আরে জোরে চিৎকার দেওয়ার কারণে পেটে পিসিতে তার লেগে পেটে ব্যথা ও সৃষ্টি হয় তাই মাসিক চলাকালীন সময়ে চিৎকার না করে আস্তে আস্তে কথা বলা উচিত।

 দৌঁড়াদৌড়ি ও বেশি হাঁটা হাঁটি না করা

মাসিকের সময় দৌঁড়াদৌড়ি ও বেশি হাটাহাটি করলে পেঁটে চাপ লাগে এবং পেঁটে চাপ পড়ার পড়ার কারণে পেঁট ব্যাথা সৃষ্টি হয়। তাই মাসিক চলাকালীন সময়ে বেশি দৌঁড়াদৌড়ি ও হাটাহাটি না করা।

আদা

ব্যাথার জন্য আদার রস খুবই কার্যকরী একটা উপাদান। শুধু পিরিয়ডের ব্যাথা না পেটে যে কোন ব্যাথা হলে আদার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে, চায়ের সাথে অথবা এমনি এমনি কুচি করে মাসিক শুরু হওয়ার পর তিন-চার দিন, তিন বেলা করে খেলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

রসুন

আদিকাল থেকে রসুনের ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে। ব্যাথা কমাতে রসুনের তুলনা নেই। শুধু পিরিয়ডের ব্যাথা না পেটে ব্যাথা ,হাঁটু ব্যাথা, কোমর ব্যাথা ,হাত ব্যথা, পা ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা ,পায়ের গোড়ালি ব্যাথা যে কোন ধরনের ব্যাথা কমাতে রসুনের ব্যবহার অতুলনীয়। রসুনের খোসা ছাড়িয়ে কয়েকটি রসুন সেসা করে সরিষার তেলের মধ্যে দিয়ে ভালো করে গরম করতে হবে তারপর ওই তেল ব্যাথার স্থানে আসতে আসতে করে ম্যাসাজ করতে হবে এতে দুই মিনিটের মধ্যে ব্যাথা সেরে যায়।

আলতো মালিশ

পেটের যেই স্থানে ব্যাথা করে সেই স্থানে যদি আলতো ভাবে মালিশ করতে পারেন। বৃত্তের আকারে মালিশ করলে ব্যাথার স্থানে আরাম পাওয়া যায়।

শ্বাসের ব্যায়াম

যখন আমাদের শরীরে কোথাও ব্যাথা করে আমরা অনেক সময় অজান্তেই অগভীর শ্বাস নেই। ফলে ব্যথা আরো বেড়ে যায়। তাই ব্যথা কমানোর ভালো একটা উপায় হল শ্বাসের ব্যায়াম করা। শেষের ব্যায়াম শুয়ে বসে দুই ভাবেই করা যায়। তবে হেলান দিতে হবে তারপর নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে পেট ফলাতে হবে ওর মুখ দিয়ে স্বাস ছাড়তে হবে এমন ভাবে, যেন আমরা একটা মোমবাতি নেভাচ্ছি। মতো শাসিত প্রেম করছেন কিনা এটা বোঝার জন্য একটা হাত পেটের উপর একটা হাত বুকের উপর রাখতে হবে। বুকের হাত নাড়াচাড়া করবে না পেটের হাত নড়াচড়া করবে। যদি আপনি শ্বাসের ব্যায়ামটি করে থাকেন তাহলে বোঝা যাবে।কারণ শাঁসের ব্যায়াম করার সময় নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য পেট একবার উঁচু হবে, একবার নিচু হবে তাই হাত দেওয়ার পর বোঝা যাবে ব্যায়ামটা করা হচ্ছে কিনা। এভাবে পাঁচ থেকে দশ মিনিট শ্বাসের ব্যায়াম করলে পেট ব্যাথা কমে।

তা করে সে ব্যথার কিছু ঘরোয়া উপায় উপরে বলা হয়েছে এই ঘরোয়া উপায়ে যদি পেটে ব্যথা না কমে তখন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হবে আর এই ওষুধট কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই খাওয়া যায়। ওষুধ টার নাম হল আইব্রুপ্রফেন।এই ট্যাবলেট টা ৪০০ মিলিগ্রাম। এই ট্যাবলেটটা চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পর খেতে পারেন ওষুধটা খাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ব্যাথা কমে যায়। এই ওষুধটা খালি পেটে খাওয়া যাবে না কোন খাবার খেয়ে অথবা ১ গ্লাস দুধ খেয়ে তার পর খেতে হবে না হলে পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যাদের বয়স ১৬ বছরের উপরে তারা ৫০০ মিলি গ্রামের প্যারাসিটামল অথবা ১০০০ মিলি গ্রাম ট্যাবলেট চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পর খেতে পারেন এতেও পেটের ব্যাথা কমে।

ঔষধ প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়াও ব্যাথা কমানোর আরেকটি উপায় আছে। এই ব্যাথা কমানোর ওষুধ ছাড়াও এখন একটা মেশিনও পাওয়া যায় মেশিনটার নাম হল (TENS) মানে Transcutaneous Electrical Nerve Stimulation. ব্যাথা কমানোর এই ছোট্ট মেশিনটা বৈদ্যুতিক কারেন্ট ব্যবহার করে পেটের ব্যাথা কমিয়ে দেয়। এছাড়া যাদের প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে মাসিকের ব্যাথা না কমে তাদের ভালো কোন চিকিৎসক দেখানো দরকার কারণ শরীরের মধ্যে হরমোনাল সমস্যা,পিআইডি, এন্ডোমেট্টোসিস্ট ইত্যাদি এই ধরনের রোগ থাকলে মাসিকের সময় তল পেটে ব্যাথা করে তাই চিকিৎসক দেখিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা হওয়া জরুরী। চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই সুস্থ হওয়া সম্ভব।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।
Back to top button