মেয়েদের সাদা স্রাব এর কারন

এখনকার মেয়েরা বাইরে ও ঘর দুটো একসাথে সামলাচ্ছে আর এই ঘর ও বাইরে সামলাতে গিয়ে নিজেদের প্রতি যত্ন নিতে পারছে না। যার জন্য তারা অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো সাদা স্রাব। তবে সাদা স্রাব প্রত্যেক মেয়েরই হয়ে থাকে। ২ থেকে ৫ মিলি সাদা স্রাব যাওয়াটা স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি হলে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তখন এটাকে সমস্যা ধরা চলে। অনেক মেয়েরা এই সমস্যাটাকে তেমন গুরুত্বের চোখে দেখে না। ভাবে এটা একটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু এটা ভাবা ঠিক না এটা যদি গুরুত্বের চোখে না দেখা যায় বা চিকিৎসা না হয় তাহলে এটাই মারাত্মক আকার ধারণ করে।
অনেকেই প্রশ্ন সাদাস্রাব কেন হয় ?
জৌনি পথে যেসব ব্যাকটেরিয়া থাকে , তাদের মধ্যে কোন কারনে যদি অদল বদল হয়, জৌনি পথের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায় তখন এই রোগ দেখা দেয়, যার নাম সাদা স্রাব (white Discharge)। সাদা স্রাব ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন থেকে হয়।
আবার ইস্ট এর ইনফেকশন থেকেও এই সাদা স্রাব হয়ে থাকে। অনেক মেয়েরা নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খায়, এই পিল খাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন আসে আর এই পরিবর্তনের কারণে সাদাস্রাব হয়ে থাকে। অনেক মেয়েরা নিজেকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করে যার ফলে তারা ক্যামিকেল যুদ্ধ সাবান জৌনিতে ব্যবহার করেন। যার ফলে ইনফেকশন সৃষ্টি হয় আর এই ইনফেকশনের কারণে সাদা স্রাব হয়ে থাকে।
অনেক সময় মেয়েরা অসুরক্ষিত ভাবে পুরুষদের সাথে মেলামেশা করে, আর এই মেলামেশার কারণে সাদাস্রাব হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু মেয়েরা একাধিক শারীরিক সম্পর্কে যুক্ত, এই একাধিক মেলামেশার কারণে ইনফেকশন সৃষ্টি হয় আর তা থেকে শুরু হয় সাদা স্রাব। পানি কম খাওয়ার কারনেও সাদা স্রাব হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের জন্য সাদা স্রাব হয়ে থাকে। তবে এই সাদা স্রাব হওয়ার যে কোন কারণ থাকতে পারে সেটা বড় কথা না। সাদা স্রাব হচ্ছে, এটার গুরুত্ব দিতে হবে এবং কি চিকিৎসা নিতে হবে। না হলে মারাত্মক আকার ধারণ করবে তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
সাদা স্রাবের প্রতিকার
সাদা স্রাব প্রত্যেক মেয়েরই হয়ে থাকে তবে তার লিমিট আছে। দিনে যদি দুই থেকে পাঁচ মিলি হয়ে থাকে তবে সেটা সাধারণ বিষয়ৎএবং সেটা উপকার হিসেবে ধরা যায়। অনেকেই ভাবে সাদা স্রাব হলে শরীর নষ্ট হয়ে যায়, চিকন হয়ে যায় এটা ভুল ধারণা এর দুটো উপকারও আছে।
১। মাসিকের রাস্তা পরিষ্কার করে।
২। মাসিকের রাস্তা ইনফেকশন হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। তখন-ই এই স্রাব সমস্যা জনক। সেটা হলো দিনে ৫ মিলি এর বেশি স্রাব হয়ে থাকে , এবং জৌনিতে চুলকানি ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব তখন সেটাকে সমস্যা ধরা চলে। তখন ভালো মহিলা বিশেষজ্ঞ ডাক্টারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারকে সব খুলে বলতে হবে। কতটুকু হচ্ছে কি পরিমান হচ্ছে কি রংয়ের, কতটা গাঢ় সবটাই ডাক্তার কে খুলে বলতে হবে। তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা সেবা। সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসা নিতে হবে এবং চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না ঠিক হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি পান করা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সাদাস্রাব কমে যায়। শরীরে আলো বাতাস দেওয়া খুবই প্রয়োজন তাই অনেক দীর্ঘ সময় ফিটিং ড্রেস পড়ে থাকলে শরীরে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। শরীরে আলো বাতাস প্রবেশ করার জন্য ঢোলা ঢালা পোশাক পরিধান করা দরকার। যাতে খুব সহজেই শরীরে আলো বাতাস প্রবেশ করে।
শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে তাতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে না। তাই সুস্থ থাকার জন্য শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটাও জরুরী।
সাদা স্রাব এর চিকিৎসা
মেয়েদের সাদা স্রাব হবে এটা স্বাভাবিক তবে এর যদি লিমিট অতিক্রম করে এবং যৌনিতে চুলকানি ও দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব হয় তখন ভালো মহিলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে এবং ডাক্তারকে সব খুলে বলতে হবে। এই রোগের চিকিৎসা হয় এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে, সেটা হতে পারে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট অথবা যৌনিতে দেওয়ার ক্রিম বা জেল। এই রোগের ব্যাপারে একটু সাবধান সময় মতো চিকিৎসা না হলে জরায়ুতে ছড়িয়ে পরবর্তীতে বাচ্চা নিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে সময় মতো এন্টিবায়োটিক ওষুধে এই রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা যায়। ওষুধ খাওয়ার পর আবার টেস্ট করতে হবে সমস্যাটা সেরে গেছে কিনা এটা একটা যৌনবাহিত রোগ।
সাদা স্রাবের প্রাথমিক চিকিৎসা
১। ভাতের মার, নিয়মিত ভাতের মার খেলে সাদা স্রাব কমে যায়।
২। রোজ সকালে নাস্তার সাথে দুই একটা করে পাঁকা কলা খেলে সাদা স্রাব কমে যায়।
৩। কাঁচা কলা সবজি হিসেবে রান্না করে খেলে সাদা স্রাব কমে যায়।
৪। ঢেঁরস, এক লিটার পানির মধ্যে কয়েকটা ঢেঁড়স দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে পানি ঘন হয়ে অর্ধেক হয়ে আসলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এমনি খেতে না পারলে ওর মধ্যে মধু মিশিয়ে টানা এক সপ্তাহ দিনে দুই থেকে তিনবার এই ঢেঁরস সিদ্ধ পানি পান করলে সাদা স্রাব কমে যায়।
৫। মেথি সাদা স্রাব কমাতে সব থেকে কার্যকরী একটি উপাদান। ১ চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। সকালে পানি টুকু ছেকে তার মধ্যে মধু মিশিয়ে খেলে সাদা স্রাব কমে যায়।
৬। পেঁয়ারার কচি পাতা ১ লিটার পানির মধ্যে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে । পানি অর্ধেক হয়ে এলে ওই পানি দিয়ে ২বার খাবার খাওয়ার আগে খেতে হবে। ১ মাস খেলে সাদা স্রাব তো দুর হবেই , সাথে যে কোন সংক্রমিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৫। মধু ও তুলশি পাতার রস এক সঙ্গে মিশিয়ে রোজ সকালে টানা ২ সপ্তাহ খেলে সাদা স্রাব কমে যায়।
৭। ১ চামচ ধনিয়ায় বীজ ১ গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ওই পানি খালি পেঁটে ৭ থেকে ১০ দিন খেলে সাদা স্রাব কমে যাবে।
৮। উলোট কম্বল এর ডাটা ছোট ছোট করে কেটে পানির মধ্যে চিনি অথবা মিশরি দিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করতে হবে।
এভাবে কিছু দিন নিয়মিত খেলে সাদা স্রাব কমে যায়।
৯। দইলতা গাছের চার থেকে পাঁচটা পাতা ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর সেই পাতা বেটে এক গ্লাস পানির মধ্যে চিনি অথবা মিশরির সাথে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খালি পেঁটে ৭ থেকে ১০ দিন খেলে সাদা স্রাব কমে যাবে।
সাদা স্রাবের লক্ষণ
১। অতিরিক্ত শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।
২। হাতের তালু জ্বালাপোড়া করা।
৩। প্রচন্ড মাথা ঘোরা।
৪। মাথার তালু সব সময় গরম হয়ে থাকা।
৫। মেজাজ খিঁটখিঁটে থাকা।
৬। চোখের নিচে কালো হয়ে যাওয়া।
৭। অনেক সময় চুল ওঠার সম্ভাবনা হয়ে থাকে।
৮। দিনের পর দিন শরীর শুকিয়ে যাওয়া।
৯। স্কিনের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ।
১০। তল পেটে ব্যাথা করা।
১১। খাবারে অতিরিক্ত অরুচি।
সাদা স্রাবের করণীয়
সাদা স্রাব দেখা দিলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ভাতের মার খেতে হবে। সকালের নাস্তায় পাঁকা কলা খেতে হবে এবং কাঁচা কলা সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে হবে। অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার, ফাস্টফুড খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন: পেঁপে, ঢেঁড়স ইত্যাদি। অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা না করা। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া ও নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।