স্বাস্থ্য

সহবাসের পর মাসিক না হলে করনীয়

মাসিক হলো নারী দেহের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেক মেয়েরই প্রতিমাসে মাসিক হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় এই সময়ের পরেও বিনা কারনেই মাসিক মিস যায়। মাসিক মিস হওয়ার কারণে অনেক মেয়েরা অনেক চিন্তিত বোধ করেন। বিশেষ করে যারা বিবাহিত এবং কি সহবাসের পর যদি মাসিক না হয়ে থাকে তখন তারা অনেক চিন্তিত হন কারণ তখন তারা ভাবেন হয়তো তারা সন্তান সম্ভাবনা যে কারণে তাদের মাসিক হচ্ছে না।

সহবাসের পর মাসিক না হলে করনীয়

সহবাসের পর মাসিক না হলে প্রথমে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা দরকার। প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করার মাধ্যমে গর্ভবতী কিনা সঠিক জানা যাবে। গর্ভধারণের সময় যেহেতু আগে Human chorionic gonadotropin হরমোন মিশ্রিত হয় প্রস্রাব পরিক্ষা করার মাধ্যম আমরা আসলে প্রস্রাবের Human chorionic gonadotropin এর উপস্থিতি দেখি। এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সি পজিটিভ না নেগেটিভ তা নিশ্চিত করা হয়। প্রথমতো মাসিকের সময় ১০ দিন পার হয়ে গেলে তার ১০দিন পর অর্থাৎ মাসিক যদি ১ তারিখে হ‌ওয়ার কথা থাকে কিন্তু তা হয়নি, তাহলে ১০ দিন পরে অর্থাৎ ১০ থেকে ১৫ তারিখে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে হবে।

আর প্রস্রাব পরীক্ষা করার জন্য সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথম প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করলে সঠিক ফলাফল আসবে। প্রথম প্রস্রাব বলতে বোঝায় রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল বেলা যখন প্রথমে প্রস্রাব করা হয় সেই প্রস্রাব। আর প্রস্রাবটি যে পাত্রে সংরক্ষণ করবেন সেই পাত্রটি অবশ্যই পরিষ্কার এবং শুকনো পাত্র হতে হবে। আর সেই পাত্রটি পরিষ্কার করার জন্য কিন্তু কিছুতেই সাবার বা ধোয়ার পাউডার দিয়ে ধোয়া যাবেনা। সাবান দিয়ে ধোয়ার কারনে সঠিক ফলাফল আসবে না।প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করার জন্য ভালো মানের টেস্ট কিট ব্যবহার করলে সঠিক ফলাফল আসবে। অনেক সময় ভালো মানের টেস্ট কিট ব্যবহার না করার কারণে সঠিক ফলাফল আসে না। ভালো মানের একটি টেস্ট কিটের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

কিভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন?

রাতে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম বাথরুমে গিয়েছে প্রসাব করা হয় তাকে বলা হয় সকালের প্রথম প্রস্রাব ও প্রসব পরিস্কার একটু শুকনো পাত্র সংরক্ষণ করতে হবে পাত্রটি যেন সাবান বা ওয়াশিং পাউডার দিয়ে না ধোয়া হয়। যে টেস্ট কিট টা নিবেন তাতে লেখা আছে c control t test তারপরে লেখা আছে s simple যেখানে s দেওয়া আছে সেখানে ওই পাত্রে রাখা প্রস্রাব তিন ফোঁটা দিতে হবে ৩ ফোঁটা দেওয়ার পর যখন c মানে control লাইনে দুটো লাল দাগ আসবে তাহলে বুঝতে হবে প্রেগনেন্সি পজিটিভ আর যদি একটি দাগ আসে তাহলে বুঝতে হবে প্রেগনেন্সি নেগেটিভ। তবে যদি নিজের কাছে মনে হয় যে সে গর্ভধারণ করেছে কিন্তু প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এ তার নেগেটিভ আসছে। বার বার পরীক্ষা করার পর ও নেগেটিভ আসছে তখন তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভধারণ করেছে কিনা ফলাফল বের করে নিশ্চিত হতে হবে। অনেক সময় টেস্ট কিট এ ভুল দেখাতে পারে তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাই ভালো।

সহবাসের পর মাসিক না হওয়ার কারণ

প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েদের অবুলেশন বা ডিম্বপাত হয়। আর এই ডিম্বপাত হয় যখন থেকে একটি মেয়ের পিরিয়ড হয় তারপর থেকে প্রতিমাসেই একটি নির্দিষ্ট সময় ২৮ থেকে ২৯ দিন পর পর এই ডিম্বপাত হয়ে থাকে। আর এই ডিম্বপাত বা ওভুলেশনের সময় মিলন করলে শুক্রাণু ও ডিম্বানু একত্রিত হয়ে ভ্রনের সৃষ্টি হয় এবং গর্ভধারণ হয়। আর যে সব মেয়ের মাসিক হয় না তাদের ডিম্বাষয়ে কোন ডিম্বানু সৃষ্টিই হয় না। আর ডিম্বানু না থাকলে গর্ভধারণ করা কোন নারীর পক্ষে একে বারেই সম্ভব না। অনেক সময় বিয়ের পর মেয়েরা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আর এই দুশ্চিন্তা গুলো হতে পারে পারিবারিক চিন্তা, সামাজিক চিন্তা, অর্থনৈতিক চিন্তা, মানসিক চিন্তা।

এই ধরনের চিন্তা ও মানসিক চাপ মাসিক না হওয়ার কারণ হতে পারে। অধিকাংশ নারীদের বিয়ের পর মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। এক মাস, দুই মাস, তিন মাস পর পর ও মাসিক হয়ে থাকে। এটাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। এটা গর্ভধারণের লক্ষণ না। গর্ভধারণের সময় মেয়েদের শরীরে বেশ কিছু হরমোনাল পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনগুলো হলো:
1. HCG (human chorionic gonadotropin).
2. Estrogen.
3. Progesterone.
4. Human chorionic somatommotropin.
5. Relaxin.

এগুলোর মধ্যে প্রথমে মেয়েদের শরীরে Human chorionic gonadotropin মিশ্রিত হতে থাকে। অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বানু মিলিত হ‌ওয়ার ৮ থেকে১১ দিন পর Human chorionic gonadotropin হরমোন রক্তে এবং প্রস্রাব পরিক্ষা করলে পাওয়া যাবে। এর প্রধান কাজ হলো Estrogen and progesterone হরমোন এর মাত্রা কমিয়ে দিয়ে মেয়েদের অবুলেশন বন্ধ করা। আর এই কারনেই সহবাসের পর গর্ভধারণ হলে মাসিক বন্ধ থাকে। গর্ভধারণএর পর থেকে মেয়েদের শরীরে Human chorionic gonadotropin হরমোন কয়েক গুণ করে। আস্তে আস্তে করে বৃদ্ধি হতে থাকে। এবং ১২ সপ্তাহের পর থেকে এটি আস্তে আস্তে পুনরায় কমতে থাকে।

তাই প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করলে মাসিক বন্ধের ১০ দিন পর থেকে ১২ সপ্তাহের পর করতে হবে না হলে সঠিক ফলাফল আসবে না। ১০-১২ দিন পর যখন প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা হবে তখন যদি নেগেটিভ আসে তাহলে আরো ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে মোট ৪৫ দিন ৪৫ দিন পর প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করার পর যদি পজিটিভ আসে তাহলে সে গর্ভবতী আর যদি নেগেটিভ আসে তাহলে সে গর্ভবতী না তখন তাকে ভাবতে হবে তার মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ অন্য কিছু গর্ভবতী না এবং অপেক্ষা করতে হবে বা ভালো কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী হওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে সেগুলো যদি শরীরের মধ্যে অনুভব না হয় তাহলে বুঝতে হবে হয়তো সে গর্ভবতী না আরও কিছু গর্ভবতী হয় তাহলে তার শরীরের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসবে সেগুলো হল বমি বমি ভাব মাথা ঘোরা মাথা ব্যাথা করা খাবারে অরুচি বেস্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। অনেকের মাথা ঝিমঝিম করে শরীর কাপে। অনেক সময় প্রেগনেন্সি না হওয়ার পরও মাসিক বন্ধ যায় দুই মাস তিন মাস পর মাসিক হয়ে থাকে। শরীরের শারীরিক কোন সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। মাসিক না হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে মানসিক চাপ কম বয়স থেকে অনেক বয়স্ক মানুষ কম বেশি সবারই মানসিক চাপ আছে কারো সামাজিক চাপ কারো পারিবারিক চাপ কারো মানসিক চাপ আবার কারো পড়াশোনার চাপ আর চাপ অতিরিক্ত চিন্তা একমাত্র মাসিক বন্ধ করার প্রথম কারণ।

মাসিক বন্ধ হওয়ার বা অন্যের মতো হওয়ার একটি কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন বা রূগ্ন। উচ্চতার সাথে ওজনের একটি মিল থাকে উচ্চতার সাথে যখন ওজন অতিরিক্ত বেশি হয়ে যায় তাকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান বলা হয়। আর এই অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ও নিয়মিত মাসিক হওয়ার আরেকটি কারণ। আবার অনেক নারীরা আছেন একেবারে শুকনো স্বাস্থ্য হীনতায় ভুগছেন তাদেরও অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় মেয়েরা বিবাহিত হ‌ওয়ার পর তাদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে তাই বলে সে গর্ভধারণ করেছে এটা ভুল কথা সে গর্ভধারণ না করার পরও মাসিক বন্ধ হতে পারে।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।
Back to top button