নিউজ

পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ও ঐতিহ্য – শুভ নববর্ষ ১৪৩১

আপনি কি পহেলা বৈশাখের ইতিহাস জানেন? আপনার কি পহেলা বৈশাখের ইতিহাস জানার আগ্রহ আছে? আজকের এই নিবন্ধে আমরা পহেলা বৈশাখের আসল ইতিহাস তুলে ধরব। পহেলা বৈশাখ হিন্দু সংস্কৃতি নাকি বাঙালি সংস্কৃতির সে সকল বিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই পহেলা বৈশাখের আসলে ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের এই নিবন্ধটি ভালো করে অনুশীলন করবেন। এই নিবন্ধে আমরা পহেলা বৈশাখের ইতিহাস তুলে ধরেছি।

পহেলা বৈশাখের কথা মনে হলেই পান্তা-ইলিশের কথা মনে আসে। সবচেয়ে বেশি যে কথাটি মনে পড়ে সেটি হল এটি বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। আমি এ কারণেই বাঙ্গালীদের কথা বললাম কারণ বাঙালির সার্বজনীন উৎসব এটি। অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই উৎসবে কখনো হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যোগ করা যাবে না। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীদের উৎসব, বাঙালি জাতির উৎসব বাঙালিত্বের উৎসব। তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা পহেলা বৈশাখের আসল ইতিহাস তুলে ধরেছি।

পহেলা বৈশাখ উন্নত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বাংলা ক্যালেন্ডারের বৈশাখ মাসের প্রথম দিন টিকে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। অনেকেই পহেলা বৈশাখকে হিন্দুয়ানী উৎসব হিসেবে অবহিত করে থাকে। এই কথাটি পুরোপুরি ভুল পহেলা বৈশাখ একটি সার্বজনীন উৎসব এটি বাঙালি জাতির সার্বজনীন উৎসব এবং অসাম্প্রদায়িক উৎসব। আমি বাংলা নববর্ষের অথবা পহেলা বৈশাখের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করছি।

পহেলা বৈশাখের ইতিহাস

আমরা সকলেই মোগল সাম্রাজ্যের কথা জানি। মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মোগল সম্রাট আকবর যখন খাজনা আদায় করতে কৃষকদের কাছ থেকে তখন আরবি সাল গণনা করা হতো। আরবি সাল চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করার কারণে কৃষি কাজের সাথে অমিল থেকে যেত। তখন কৃষকেরা ঠিকঠাক মত খাচ্ছ না দিতে ব্যর্থ হত। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য মোগল সম্রাট জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আরবি সাল সংস্কার করার আদেশ দেন। এই দায়িত্ব এসে পড়ে জ্যোতিষ বিজ্ঞানে ফতেউল্লাহ সিরাজী এর উপর। হতে উল্লাহ সিরাজী আরবি সাল কে বিনির্মাণ করে সৌর সাল নামে নতুন সাল গণনা শুরু করে। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। কিন্তু এই সাল কার্যকর করা হয় সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহনের সময় থাকে। প্রথমে এই সালের নাম ছিল ফসলী সন’ পরে এর নাম পরিবর্তন করে বঙ্গব্দ বা বাংলা সন নামে পরিচিত হয়।

আকবরের সময় থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেকে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা মাশুল শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকতো। এরপরের দিন বা পহেলা বৈশাখের দিন ভূমির মালিকানা বা ভূমির মালিকানা অঞ্চলের আদিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা পান করত। এ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এই অনুষ্ঠানগুলোর সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবর্তন হয় এবং পরবর্তী রূপ আজকের এই পহেলা বৈশাখ।

বাংলাদেশ পহেলা বৈশাখ উদযাপন

নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তি একসময় প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে, যা জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত।

এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পহেলা বৈশাখের দিন মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে। রমনার বটমূলে সেদিন সকাল থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়ে থাকে। এদিন তরুণ-তরুণীদের পরনে শোভা পায় শাড়ি ও পায়জামা-পাঞ্জাবি। প্রত্যেককেই ইলিশ এবং পান্তা ভাত খেয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পছন্দ করে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এবং রমনার বটমূলে একত্রিত হয়ে এই দিনটি উদযাপন করে।

এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল “শুভ নববর্ষ”। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে।

Md Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button