দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা ২০২৩

সম্মানিত পাঠক, 26 শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২০২ নিয়ে কিছু কথা আপনাদের জানাতে এসেছি। আপনি যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা বলানো অনুসন্ধান করেন তাহলে এই নিবন্ধে আপনাকে স্বাগতম। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। 30 লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় এবং 2 লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখবো এই প্রত্যয় আজকের এই নিবন্ধটি শুরু করছি।

26 মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন। তাই স্বাধীনতার ৫২ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কিছু কথা আজকের এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করলাম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা ২০২৩

সত্তরের নির্বাচনে বাঙালিরা তখন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করে , তখন পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করে দেয়। তখন থেকেই বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে 7 মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণের পর থেকে বাঙালি জনসাধারণ স্বাধীনতার জন্য ফুলে-ফেঁপে ওঠে । বাঙালিরা সেদিন স্বাধীনতার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে উঠে।

এর মধ্যে 25 শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর বর্বরোচিত গনহত্যার চালায়। পরদিন 26 শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সেই ঘোষণাপত্রটি পাঠ করে শুনান মেজর জিয়াউর রহমান। 25 শে মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এরপরে মূলত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে এদেশের সাধারন মানুষ। কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজুর, ছাত্র-শিক্ষক সকলকে নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। এভাবেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। সে সময় প্রায় 2 কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় ভারতে এবং ভারতের সরকার এই মানুষদের আশ্রয়ের পাশাপাশি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের যুদ্ধ করার জন্য তৈরি করে।

বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার সন্তান যারা পাকিস্তানিদের সহায়তার জন্য রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গঠন করে।

যুদ্ধের এক পর্যায়ে ২ ডিসেম্বর 1971 ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয়। মিত্রবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেওয়ার পরপরই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। মিত্রবাহিনী এবং মুক্তি বাহিনী যৌথভাবে অপারেশন পরিচালনা করে খুব দ্রুত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলে। এবং খুব দ্রুত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হয়। অবশেষে 16 ডিসেম্বর 1971 বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ সেনা সহ যাবতীয় সহযোগিতা করেছিল ভারত। অস্ত্রসহ আরো অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমান রাশিয়া।

স্বাধীনতা দিবসের কিছু কথা

২০২৩ সালে বাংলাদেশ 51 তম স্বাধীনতা দিবসে পদার্পণ করবে। এর আগে 2021 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দ আমাদের সাথে স্বাধীনতার আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল 26 শে মার্চ।
  • বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মেজর জিয়াউর রহমান।
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল।
  • 2 লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়েছিল।
  • স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল 2 মার্চ 1971। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে এই পতাকা উত্তোলন করা হয়।
  • তৎকালীন ডাকসু নেতা ভিপি আসম আব্দুর রব প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

২৬ শে মার্চ ২০২৩ কত তম স্বাধীনতা দিবস?

স্বাধীনতা দিবসের সূচনা কাল ছিল ১৯৭১ সাল। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ছিল স্বাধীনতা ঘোষণার দিন। উক্ত দিন থেকে পরবর্তীতে প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে আমরা পালন করি। ২০২৩ সালের ২৬ শে মার্চ হচ্ছে ৫২ তম স্বাধীনতা দিবস।আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। ২০২৩ সাল স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী থেকে এক বছর পেরিয়ে গেল।

স্বাধীনতা দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর

১. স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা কত তারিখে উত্তোলন করা হয়?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রঙ্গনে এক ছাত্র সমাবেশে )

২. কে প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন?

উত্তরঃ তৎকালীন ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব

৩. বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কে? তখন পতাকার লাল বৃত্তের মধ্যে কিসের প্রতীক ছিল?

উত্তরঃ কামরুল হাসান; বাংলাদেশের মানচিত্র

৪. কবে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়?

উত্তরঃ ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে পল্টন ময়দানে

৫. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কোথায় দেন?

উত্তরঃ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)

৬. ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কয় দফা দাবি পেশ করেন?

উত্তরঃ ৪ দফা

৭. অপারেশন সার্চলাইট কবে হয়?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে (বৃহস্পতিবার)

৮. অপারেশন সার্চ লাইট কি?

উত্তরঃ পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃৃক বাংলাদেশীদের ওপর বর্বরোচি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ

৯. কে কখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন?

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ( ২৬ শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ সালে)

১০. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হয় কবে?

উত্তরঃ ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে।

১১. মুক্তি ফৌজ গঠন করা হয় কবে?

উত্তরঃ ৩রা এপ্রিল, ১৯৭১ সালে

১২. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী ইতালির নাগরিকের নাম কি?

উত্তরঃ মাদার মারিও ভেরেনজি ( ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল )

১৩. সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীন মন্ত্রীসভা গঠিত হয় কখন?/ বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিলো কখন?

উত্তরঃ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে

১৪. বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছিলো কখন?/ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার শপথগ্রহণ করেছিলো কখন?

উত্তরঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল (বৈধ্যনাথতলা, মেহেরপুর)

১৫. বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাজধানী কোথায় ছিলো?

উত্তরঃ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে

১৬. মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান

১৭. মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ তাজউদ্দিন আহমেদ

১৮. মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম

১৯. মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী

২০. “ এ দেশের মাটি চাই, মানুষ নয়” – উক্তিটি কার?

উত্তরঃ জেনারেল ইয়াহিয়া খান

২১. মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (সংক্ষেপে জেনারেল এম এ জি ওসমানী)।

২২. মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কয়টি?

উত্তরঃ ১১ টি

২৩. মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা কোন সেক্টরের অধীনে ছিল?

উত্তরঃ দুই নাম্বর সেক্টর।

২৪. মুক্তিযুদ্ধের ব্যতিক্রমধর্মী সেক্টর কোনটি?

উত্তরঃ ১০ নং সেক্টর ( নৌ সেক্টর )

২৫. খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কতজন?

উত্তরঃ ৬৭৬ জন। বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীরউত্তম ৬৮ জন, বীরবিক্রম ১৭৫ জন ও বীর প্রতীক ৪২৬ জন।

২৬. দুইজন মহিলা বীরপ্রতীক কে ছিলেন?

উত্তরঃ তারামন বিবি ও ডা. সিতারা বেগম

২৭. একমাত্র বিদেশী বীরপ্রতীক কে?

উত্তরঃ নেদারল্যান্ড বংশোদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড

২৮. বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা কে?

উত্তরঃ শহীদুল ইসলাম (১১ বছর) বীর প্রতীক

২৯. বর্তমান মুজিবনগরের পূর্ব নাম কি ছিলো?

উত্তরঃ ভবেরপাড়া

৩০. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শেখ মুজিবকে কোথায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল?

উত্তরঃ পাকিস্থানের করাচি শহরের মিয়ানওয়ালি কারাগারে। ( মুক্তি পান ৮ জানুয়ারি আর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে দেশে পৌঁছান )

Md Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button