শিক্ষা

শবে বরাত নিয়ে হাদিস, বাণী, উক্তি ২০২৪

শবে বরাত ফাসিভাষার দুটি যুক্ত শব্দ। শব শব্দের অর্থ রাত বরাদ্দত না নামাজ বা মুক্তি। আরবি ভাষায়ও বড় আজ শব্দের ব্যবহার আছে এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। হাদিসের ভাষায় এ রাতে লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান তথা ১৫ শাবানের রাত বলা হয়ে থাকে। এ রাতে ফজিলত সম্পর্কে কুরআন মাজিদে সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও হাদিস শরীফে নির্ভরযোগ্য সনদ বা বর্ণনা সূত্রে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবী মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ সাবানের রাতে অর্থাৎ সাবানের 14 তারিখ দিবাগত রাতে তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশফিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনেহেব্বান, হাদিস ৫৬৬৫)।

মুহাদ্দিসিনে কেরামের ভাষ্যমতে, হাদিসটির মান সহিহ তথা বিশুদ্ধ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান(রহ.) তার প্রসিদ্ধ হাদিসের রচিত কিতাবুস সহীহ এই হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া এ সংক্রান্ত অনেক হাদিস আছে, যে গুলো এর অর্থ কে শক্তিশালী করে। তাই এই রাত আসার আগে শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত থেকে মহান আল্লাহর রহমতে আশায় থাকা মুমিনের কর্তব্য।আর এ রাতের আমলের ব্যাপারে বিভিন্ন হাদিস থেকে বোঝা যায়, এই রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম রাত্রে জাগরণ করেছেন এবং দীর্ঘ আমলে মশগুল ছিলেন। তবে এই রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোন ইবাদত তিনি আদায় করেননি এবং সাহাবায়ে কেরামদেরও তা করার নির্দেশ দেননি। তাছাড়া পূর্ববর্তী সালাফরা এ রাতের বিশেষ পদ্ধতির কোন ইবাদত করেননি বরং প্রত্যেকের নিজ নিজ ব্যক্তিগত ইবাদতে মশগুল ছিলেন। নিম্নে এ রাতের সালাফদের ইবাদত বন্দেগী, পরের দিন রোজা ও তার ফজিলত এর মূল্যায়ন নিম্নে তাদের কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

শবে বরাত নিয়ে হাদিস রেফারেন্স সহ

  • ইবনে ওমর (রা.) বলেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, সাবানের 14 তারিখ, ২ ঈদের রাত।( মুসান্নাফে আব্দ,: হাদিস ৭৯২৭)
  • ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) আদি ইবনে আর তাদের উদ্দেশ্যে লেখেন, বছরের চারটি রাত তুমি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে। কেননা সেসব রাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত- রজবের প্রথম রাত, সাবানের 14 তারিখ রাত, ঈদুল ফিতরের ঈদুল আযহার রাত। (আত- তালকিসুল হাবিব, ইবনে হাজার: ২/১৯১)
  • ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছেছে যে পাঁচ রাতে দোয়া কবুল হয়। জুমার রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত, রজবের প্রথম রাত ও শাবানা ১৪ তারিখ রাত।গুলো সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে আমি সেগুলো মুস্তাহাব মনে করি, ফরজ মনে করি না। ( আল- ইতি বার, পৃষ্ঠ:১৪৩)
  • সাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, শাবানা ১৪ তারিখ রাতের ফজিলত রয়েছে। পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের অনেকেই এই রাতে সালাত পড়তেন। তবে সম্মিলিতভাবে মসজিদের সেরা জেগে থাকা বিদআত; এমনকি দলবদ্ধভাবে জামাতে সালাত আদায় করাও বিদআত। ( আল- ফাত ওয়াল কুবরা, ইবনে তাইমিয়া: ১/১৩০১)
  • ইমাম ইবনে রজব (রহ.) বলেন, একজন মুমিন বান্দার উচিত, এ রাতে জিকির ও দেয়ার জন্য পুরোপুরি অবসর হওয়া। প্রথমে খাঁটি মনে তওবা করা, এরপর মাগফিরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, আপদ বিপদ দূর হওয়ার জন্য দোয়া করা এবং নফল নামাজ পড়া। (আতাইকুল মাআরিফ,ফ পৃষ্ঠা; ১৫১/১৫৭)
  • সালাফদের এসব বক্তব্য দ্বারা বোঝা যায়, এ রাতের ফজিলত ও ব্যক্তিগত আমল পরম্পরায় প্রমাণিত। সুতরাং এ রাতের ফজিলত ও আমল কে ভিত্তিহীন বা বিদআত বলার সুযোগ নেই। পরের দিন রোজা রাখা সম্পর্কে সালাফদের দৃষ্টিভঙ্গি
    এ প্রসঙ্গে আলী (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, ১৫ শাবানের রাতে যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)

এই বর্ণনাটি সনদ দুর্বল হলেও হাদিসের প্রথম অংশ- ইবাদতের বিষয়টি অন্যান্য হাদিস দ্বারা সমর্থিত। আর রোজার বিষয়টি শুধু এ বর্ণনা রয়েছে। তবে কেউ যদি চায় এ মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখতে তাহলে সুযোগ রয়েছে। কেননা ১৫ তারিখ হল আইয়ামে বীজের অন্তর্ভুক্ত। আইয়ামে বিজ অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১৩ ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া সাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা সহীহ হাদিসে এসেছে। তবে উত্তম হলো 15 তারিখের সঙ্গে আগে পরে একদিন মিলিয়ে নেওয়া অন্যথায় শুধু এই দিন রোজা রাখার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া মাকরুহ। এমনটাই বলেছেন শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button