শিক্ষা

শবে বরাতের নামাজ ,রোজা, আমল, নিয়ত ও ফজিলত

শবে বরাত মূলত ফারসি শব্দ। তবে হাদিসের ভাষায় বলা হয় লাইলাতুন নিসফি মিন সাবান বা মধ্য শাবানের রজনী। তাফসীরের ভাষায় এটাকে লাইলাতুস সাক, লাইলাতুর রাহমাহ লাইলাতুল বারা আত বলা হয়। মূলত সবে মানে হচ্ছে রাত আর বরাত মানে হচ্ছে মুক্তি। অর্থাত হচ্ছে মুক্তির রাত কারণ এ রাতে আল্লাহ তার অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।হাদিসে এসেছে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে বলেছেন এ রাতে আল্লাহ ভেড়া বকরির পশমের সংখ্যার পরিমাণ চেয়েও বেশি সংখ্যা পরিমাণ গুনাহকে ক্ষমা করে দেন। শাবান মাস আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নির্ধারিত বারো মাসের একটি অন্যতম মাস। এ মাসে রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা এ মর্যাদার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। শবে বরাত সাধারণত সাবান মাসের ১৫ রাত অর্থাৎ ১৪ সাবান দিবাগত রাতই হলো সবই বরাত।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কিভাবে পড়বো?

শবেবরাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজের কথা কোন হাদিস এবং কুরআনে উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন যখন সাবানের মধ্য দিবস আসবে তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। কাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামাজ সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নফল নামাজ।
দুই রাকাত করে যত খুশি নামাজ পড়তে পারেন এই রাতে নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। এখন কথা নিয়ত কিভাবে আপনারা করবেন। শবেবরাতের নামাজের নিয়তে আপনি বলতে পারেন আমি ক্যাবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি আল্লাহু আকবার। এইভাবে নিয়ত করলে আপনার নামাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। নামাজের সূরাতুল ফাতিহা পড়ার পর তিনবার সূরা ইখলাস বা সূরা ওয়াকিআহ করতে হবে এমন কোন কথা হাদিসে নেই। নাসিরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম সুস্পষ্টভাবে এ ব্যাপারে কিছু বলেননি আপনি পবিত্র কুরআনের যে কোন সূরা পড়তে পারেন এই নামাজে।

শবে বরাতের রোজা কয়টি ও কিভাবে রাখবেন?

হাদীস শরীফে শবেবরাতের রোজার বিশেষ ফজিলত পাওয়া যায়। সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন ১৫ সাবানের রাতে তোমরা নফল ইবাদত করো এবং পরের দিন রোজা রাখো। এই হাদিস দিয়ে শবে বরাতের একটি নফল রোজা রাখা প্রমাণিত হয়। তবে বিভিন্ন হাদিসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩ ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন এবং তিনি নফল রোজা রাখতে উৎসাহিত করতেন। শেষে সাবান মাসে তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। শাবান মাসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক হারে রোজা রাখতেন। যেন তিনি গোটা সাবান মাসে রোজা রাখতেন। সে হিসেবে সাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অধিক সওয়াবের কাজ।

শবে বরাতের আমল ও ফজিলত

শবেবরাতে আমল অনেক ফজিলতপূর্ণ আসুন জেনে নেই শবেবরাতে কি কি আমল করা যেতে পারে। এশার নামাজের পর নির্জনে দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে থাকবেন। কত রাকাত পড়লেন তা মুখ্য নয় বরং কতটা মনোযোগী ও দীর্ঘ করলেন সেটাই মুখ্য বিষয় হলো এখানে এই নামাজের। হাদিস শরীফে আছে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমরা ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন ,হে আয়েশা তুমি কি আশঙ্কা করেছ আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করছেন কিনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন:জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ তাআলার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ভালো জানেন।

তখন রাসুল সাঃ বললেন এটা হল মধ্য সাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন ক্ষমা প্রার্থনা কারীদের ক্ষমা করে দেন। অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের কে তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে নামাজে অত্যন্ত মনোযোগী হতে। এবং বেশি করে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে আল্লাহ দুই ধরনের ব্যক্তি ছাড়া বাকিদের ক্ষমা করে দেয়। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শিরক করে এবং অন্য ব্যক্তি হলো যে হিংসা করে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন এই দুই ব্যক্তির মধ্যে না পড়ে যায়।

হযরত আলী (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন ১৪ সাবান দিবাগত রাত যখন আসে তোমরা এই রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে কাটে কাটা কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। এই রাতের ফজিলত ধারণার বাইরে বেশি করে নামাজ কায়েম করতে হবে। কেননা এই দিনে আল্লাহ সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবংআহ্বান করেন কোন ক্ষমা প্রার্থী আছ কি যাদের আমি ক্ষমা করব। কোন রিজিক প্রার্থী আছে কি যাদের আমি রিজিক দেব আছ কি কোন বিপদগ্রস্ত যাদের আমি উদ্ধার করব এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহর আহবান করতে থাকেন।

সুবহান আল্লাহ এই রাতে কাজা হয়ে যাওয়া নামাজ পড়তে পারেন তবে শুধুমাত্র ফরজ ও বিতর নামাজের কাযা পড়বেন। শেষ রাতে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে পারেন যারা তারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। বেশি বেশি করে তাওবা ও ইস্তেগফার করা বেশি করে দরুদ শরীফ পাঠ করা বেশি করে তসবি পাঠ করা এই রাতের মূল ফজিলত। বেশি করে দান সদকা করা। ফজর নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা। প্রতিবছরের শবে বরাত আসে আসে মুক্ত ক্ষমার বার্তা নিয়ে। আল্লাহর ভয়ে কম্পমান হৃদয়ে এ রাতে তাওবার উদ্যোগ করে। তাও আকারের জন্য ক্ষমার সওগাত নিয়ে আসে শবে বরাত পাব আক্রান্ত মন এ রাতে পরিশুদ্ধ জীবনে ফেরার তাগিত অনুভব করে।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button