দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য ও কিছু কথা

স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বহুৎ ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বহু রক্তের বিনিময়ে বাঙালিরা পেয়েছে স্বাধীনতা। তাই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে অপরিসীম । আমরা এই নিবন্ধের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরব। আপনি যদি স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য অনলাইন অনুসন্ধান করেন তাহলে এই নিবন্ধ আপনাকে স্বাগতম।

মহান স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময়। বহুৎ ত্যাগ এবং তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য আজকের এই নিবন্ধে তুলে ধরেছি।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য ও ইতিহাস

স্বাধীনতা প্রত্যেকটি জাতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আবেগের একটি বিষয়। প্রত্যেক দেশের স্বাধীনতা এমনি এমনি আসে না। প্রত্যেকটি জাতিকে কোন না কোন জাতির কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। সেই অর্জিত স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে বহু রক্ত, নিপীড়ন এবং শাসনের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এর থেকেও আরো ভয়াবহ। কারণ বাঙালিরা বলতে গেলে তুই বাকস্বাধীনতা দুইটি উপনিবেশের কাছ থেকে অর্জন করেছিল।

১৯৪৭ ব্রিটিশরা উপমহাদেশ থেকে চলে যায়। ব্রিটিশরা উপমহাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর এই উপমহাদেশ থেকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে উপমহাদেশকে হিন্দু এবং মুসলিম বসবাস করার জন্য দুটি আলাদা ভূখণ্ডের জন্ম দিয়ে গেছে ব্রিটিশরা। একটি হলো পাকিস্তান অন্যটি হিন্দুস্তান বর্তমান ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশে বিভক্ত করে দেওয়া হয়। একটি হলো পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান বর্তমান পাকিস্তান।

পাকিস্তানের দুইটি আলাদা প্রদেশের মধ্যে হাজার কিলোমিটার ব্যবধান। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সেই সময়ে অর্জিত হয়নি। পাকিস্তানের শাসনযন্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে থাকায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে উপনিবেশিক রাষ্ট্রে পরিণত করে। তারা বাংলাদেশের মানুষকে বিভিন্নভাবে শোষণ-নিপীড়ন শুরু করে দেয়। তারা বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতি ইত্যাদির উপর সর্বপ্রথম আঘাত হানে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৬৬, ৬ দফা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচন। এ সবকিছুই আমাদের ইতিহাসের সাথে জড়িত।

১৯৭০ পাকিস্তানের প্রদেশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক বাহিনী বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা না দিয়ে টালবাহানা শুরু করে। তারা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কারফিউ জারি করে এদেশের মানুষকে গণহারে হত্যা শুরু করে। এর ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 7 ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করে। তৎকালীন 7 কোটি মানুষের সেই ভাষণে ফুলে-ফেঁপে ওঠে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে এদেশের নিরীহ মানুষের উপর এক নৃশংস গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। ওই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যা হয়। এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। শুরু হয় বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। শেষ যুদ্ধ চলমান থাকে প্রায় নয় মাস। যুদ্ধে শহীদ হন এদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ। আরো ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই স্বাধীনতা। সেদিন বাংলার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালি সেদিন স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে। অবশেষে বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হয় ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১।

বাংলাদেশের এই স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস রচিত হয়েছিল। মুক্তিবাহিনী এদেশের জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবীরা সেদিন রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছিল। তারা বাংলার জ্ঞানীগুণী এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেলে নির্বিচারে গুলি করত মেরে ফেলতো। তাই এই রক্ত ক্ষয় সংগ্রামের কথা বাংলার মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে । কবি ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়।

স্বাধীনতার তাৎপর্য কথা বলতে গেলে আরেকটি কথা সবার প্রথমে বলা উচিত। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের কথা। এই মানুষটি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছে দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য। এই মানুষটি ১৯৭১ সালে তার মহান নেতৃত্বে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনে। এই মানুষটিকে কখনো ভুলতে পারিনা। কোভিদ ভাষায় বলতে গেলে বলা যায় ।
যতদিন রবে পদ্মা ,মেঘনা, যমুনা, গৌরি বহমান

ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

বহুৎ ত্যাগ এবং সংগ্রামের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার এই ৫২ বছর আমরা কতটুকু স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করতে পারছি। আমরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। আমাদের এইসব ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণকে একত্রিত হয়ে দেশ এবং জাতি গঠনে এগিয়ে যেতে হবে। এদেশে মানুষ কেউ অনাহারে, অন্ধকারে থাকবে না। এদেশের মানুষ কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। এদেশের মানুষ কখনো বেকার থাকবে না। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এই স্বপ্নটা দেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু এদেশকে একটি সোনার বাংলায় পরিণত করতে। আসুন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা সকলেই শপথ করি আমরা দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেবো না, দেশ এবং জাতি গঠনে আমরা সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকব। জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

কালী ভূষণ রায়।
এম. এস. সি. (রসায়ন)
নীলফামারী সরকারি কলেজ।

Md Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button