মাকে নিয়ে উক্তি, পিকচার, ছবি, ফেসবুক স্টাটাস, কবিতা, কিছু লেখা
হ্যালো বন্ধুরা, আজকে আরো একটি নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আজকের আলোচ্য মাকে নিয়ে উক্তি, পিকচার, ছবি, ফেসবুকে স্ট্যাটাস, কবিতা এবং কিছু কথা। এছাড়াও মাকে নিয়ে রচনা এই নিবন্ধ আলোচনা করা হবে। তো আপনি যদি মাকে নিয়ে উক্তি পিকচার ফেসবুক স্ট্যাটাস কবিতা অনলাইন অনুসন্ধান করে থাকেন তাহলে এই নিবন্ধটি আপনার। মা প্রত্যেক সন্তানের কাছে সবচেয়ে আপনজন। মায়ের কাছে একজন সন্তান সবচেয়ে নিরাপদ। পৃথিবীতে প্রথম আমরা যে কথাটি বলতে শিখি সেটি হল মা। যিনি আমাকে ছোট থেকে বড় করেছেন আদর স্নেহ দিয়েছেন তিনি আমার মা। যার কাছে গেলে পৃথিবীর সকল দুঃখ ভুলে যাওয়া যায় তিনি হলেন মা। যিনি বাবার স্নেহ ভালোবাসা একাই দিতে পারেন তিনি হলেন মা। তাই অনেকে মাকে নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের উক্তি, এসএমএস, শুভেচ্ছা বার্তা, কবিতা শেয়ার করে থাকে। তাই আজকের এই নিবন্ধে আপনি আমাকে নিয়ে আপনার কাঙ্খিত বিষয়বস্তু পাবেন।
মাকে নিয়ে উক্তি
মা কথাটি পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত । পৃথিবীতে স্মরণীয় যারা বরণীয় যাঁরা তাঁরা সবাই মাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। ওস্তাদ বায়েজিদ বোস্তামীর কথা কে না জানে? মায়ের প্রতি তার চেয়ে ভালোবাসা ছিল সেটি জগত প্রসিদ্ধ। এরকম পৃথিবীর বিখ্যাত জ্ঞানীগুণী মনীষীরা মাকে নিয়ে বিভিন্ন উক্তি দিয়ে গেছেন। সেরকমই কিছু উক্তি নিবন্ধের এই অংশ যুক্ত করেছি।
১. যার মা আছে সে কখনই গরীব নয়। – আব্রাহাম লিংকন
২. আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল। – জর্জ ওয়াশিংটন
৩. সন্তানেরা ধারালো চাকুর মত। তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়।আর মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সাথে লেগে থাকে। – জোয়ান হেরিস
৪. আমার বসার ঘরের দেয়ালে আমার মায়ের ছবি টাঙানো আছে, কারণ তিনিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। – এলেন ডে জেনেরিস
৫. কোন একটা বিষয় মায়েদেরকে দুইবার ভাবতে হয়-একবার তার সন্তানের জন্য আরেকবার নিজের জন্য। – সোফিয়া লরেন
৬. আমাদের পরিবারে মায়ের ভালোবাসা সবসময় সবচেয়ে টেকসই শক্তি। আর তার একাগ্রতা, মমতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের মধ্যে দেখে আনন্দিত হই। – মিশেল ওবামা
৭. মা আমাদের সবসময় এটা বুঝাতে চাইতেন যে জীবনের চরম কষ্টের মূহুর্তগুলো তোমাদের হাসির কোন গল্পের অংশ হয়ে যাবে এক সময়। – নোরা এফ্রন
৮. সম্ভবত আমার দেখা সবচেয়ে আবেদনময়ী আমার মা। – শিয়া লাবেউফ
৯. আমার মা মনে করেন আমিই সেরা আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি। – দিয়াগো ম্যারাডোনা
১০. তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো। – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট
১১. মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা। – হুমায়ূন আহমেদ
১২. পৃথিবীতে সবাই তোমাকে ভালোবাসবে, সেই ভালোবাসার মাঝে যে কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকে। কিন্তু একজন ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তোমাকে ভালোবাসবে সে হলো মা।
১৩. মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের স্বর্গ, মাকে যারা কষ্ট দিবে তার কখনও জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই সকলের কাছে আমার অনুরোধ তোমরা কখনও মাকে কষ্ট দিওনা।
১৪. মা জননী চোখের মনি, অসিম তোমার দান., সৃষ্টিকর্তার পরে তোমার আসন আসমানের সমান.. ত্রিভুবনে তোমার মত হয়না কারো মান।
১৫. যে গর্ভ তোমাকে ধারন করেছে সে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য কর ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর। – আল কুরআন
১৬. মা যেমন তাঁর নিজ পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করে তেমনি সকল প্রাণীর প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে। – গৌতম বুদ্ধ
১৭. মায়ের অভিশাপ কখনো সন্তানের গায়ে লাগেনা। দোয়া গায়ে লাগে, অভিশাপ গায়ে লাগেনা। হাঁসের গায়ের পানির মত অভিশাপ ঝরে পড়ে যায়। – হুমায়ূন আহমেদ
১৮. অসংখ্য কষ্ট, যন্ত্রণা পেয়েও মেয়েরা মায়ারটানে একটা ভালোবাসা, একটা সম্পর্ক, একটা সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়। এই জন্য মেয়েরা মায়াবতী আর মায়াবতীর কোনো পুরুষবাচক শব্দ নেই। – হুমায়ূন আহমেদ
১৯. ব্যবহার করা কপালের টিপটার আঠা নষ্ট হলেও মেয়েরা সেটা যত্ন করে রেখে দেয়।একজোড়া কানের দুলের একটা হারিয়ে গেলেও অন্যটা ফেলে না। পুরাতন শাড়িটা, ভাঙা চুড়িটা, নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল টা কাজে লাগবেনা জেনেও তুলে রাখে,সবকিছুর কারণ হল মায়া। মেয়েরা মায়ার টানে ফেলনা জিনিসও ফেলে না। – হুমায়ূন আহমেদ
২০. দুনিয়ার সব কিছুই বদলাতে পারে, কিন্তু মায়ের ভালবাসা কখনো বদলাবার নয়..!!
২১. মায়ের কোল যে কত বড় জিনিস তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ জানে না। শত চিন্তা আপনার মাথায়, একবার মায়ের কোলে মাথা রাখেন দেখবেন সব চিন্তা দূঢ় হয়ে যাবে। দুনিয়ার যেখানেই যান না কেন মায়ের কোলে যে শান্তি তা কোথাও খুজে পাবেন না।
২২. সকাল দুপুর রাত্রি বেলা পাইছি সবার অবহেলা। সকল দুঃখ যেতাম ভুলে মায়ের কোলে মাথা তুলে! মা যে আমার শেষ্ট বন্ধু , মায়ের কোলে সুখের সিন্ধু।
২৩. প্রথম স্পর্শ মা, প্রথম পাওয়া মা, প্রথম শব্দ মা, প্রথম দেখা মা, আমার স্বর্গ তুমি মা।
২৪. আমি বোকা হতে পারি, অনেক খারাপ ছাত্র হতে পারি, দেখতে অনেক কালো হতে পারি, কিন্তু আমার মায়ের কাছে আমিই শ্রেষ্ঠ সন্তান।
২৫. পৃথিবীর সব চেয়ে সুখ কি জান? মা-বাবার আদর সব চেয়ে কষ্ট কি জান? মা-বাবার চোখের জল. সব চেয়ে অমুল্য রতন কি জান? মা-বাবার ভালোবাসা।
২৬. ভালোবাস তাকে। যার কারনে পৃথিবী দেখেছো। ভালোবাস তাকে..। যে তোমাকে ১০ মাস ১০দিন গর্ভে রেখেছে….। ভালোবাস তাকে.. যার পা এর নিচে তোমার স্বর্গ আছে….। তিনি হলেন…..মা..।
২৭. মা মাগো মা আমি এলাম তোমার কোলে, তোমার ছায়ায় তোমার মায়ায় মানুষ হব বলে।
২৮. পৃথিবীটা অনেক কঠিন, সবাই সবাইকে ছেড়ে যায়, সবাই সবাই কে ভুলে যায়, শুধু একজনযে ছেড়ে যায় না ভুলেও যায়না। আর সারা জীবন থাকবে। সে মানুষ টি হচ্ছে,– আমার মা।
২৯. যার ললাটের ঐ সিঁদুর নিয়ে ভোরের রবি ওঠে। আলতা রাঙ্গা পায়ের ছোঁয়ায় রক্ত কোমল ফোটে। সেই যে আমার মা, যার হয়না তুলনা।
৩০. মায়ের শিক্ষাই শিশুর ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, মা-ই হচ্ছেন শিশুর সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যাপীঠ।
মা কে নিয়ে পিকচার
পৃথিবীতে এমন কোন সন্তান খুঁজে পাওয়া যাবে না সে আমাকে ভালোবাসে না। যারা মাকে ভালোবাসে না তারা মানুষ নয়, তাদেরকে পশুর সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। তাই আমরা যারা আমাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসি তারা মাঝে মাঝেই মাকে নিয়ে আমাদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করি। সেরকমই কিছু ছবি নিবন্ধের এই অংশ যুক্ত করছে। অর্থাৎ আপনি যদি মাকে নিয়ে ছবি অনুসন্ধান করেন, তাহলে নিবন্ধের এই অংশে পেয়ে যাবেন।
মাকে নিয়ে ফেসবুক স্টাটাস
সব ছেলে মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হল মা। মাকে ছাড়া কোনো সন্তান পৃথিবীতে আসার কথা কল্পনাও করতে পারে না। একটি সন্তান পৃথিবীতে এসে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সারা দিন কাটে তার মায়ের কাছে। মায়ের কাছেই প্রত্যেকটি সন্তান পড়ালেখা শিখে। একটি সন্তানের সামাজিকীকরণে মা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই আপনি যদি সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দিকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে চান? যখনই কিছু স্ট্যাটাস নির্বাচনে অংশ আমরা যুদ্ধ করছি। অর্থাৎ এখন আমরা মাকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস যুক্ত করব।
পৃথিবীটা অনেক কঠিন, সবাই সবাইকে ছেড়ে যায়, সবাই সবাই কে ভুলে যায়, শুধু একজনযে ছেড়ে যায় না ভুলেও যায়না। আর সারা জিবন থাকবে। সে মানুষ টি হচ্ছে,–আমার মা–
দুনিয়ার সব কিছুই বদলাতে পারে, কিন্তু মায়ের ভালবাসা কখনো বদলাবার নয়..!!
মা মমতার মহল, মা পিপাসার জল, মা ভালবাসার সিন্ধু, মা উত্তম বন্ধু, মা ব্যাথার ঔষুধ, মা কষ্টের মাঝে সুখ, মা চাঁদের ঝিলিক, মা স্বর্গের আভাস।
মায়ের কোল যে কত বড় জিনিস তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ জানে না । শত চিন্তা আপনার মাথায়, একবার মায়ের কোলে মাথা রাখেন দেখবেন সব চিন্তা দূঢ় হয়ে যাবে । দুনিয়ার যেখানেই যান না কেন মায়ের কোলে যে শান্তি তা কোথাও খুজে পাবেন না ।
মা দিয়ে মাসজিদ। মা দিয়ে মাদ্রাসা। মা দিয়ে মাদিনা। মা দিয়ে মাক্কা। সো মা কে কেউ কষ্ট দিয় না।
ভালোবাস তাকে.. যার কারনে পৃথিবী দেখেছো….।। ভালোবাস তাকে..।। যে তোমাকে ১০ মাস ১০ দিনগর্ভে রেখেছে….।। ভালোবাস তাকে.. যার পা এর নিচে তোমার জান্নাত আছে…..।। তিনি হলেন…..মা..
মা মাগো মা_আমি এলাম তোমার কোলে, তোমার ছায়ায় তোমার মায়ায় মানুষ হব বলে।
যার ললাটের ঐ সিঁদুর নিয়ে ভোরের রবি ওঠে .. আলতা রাঙ্গা পায়ের ছোঁয়ায় রক্ত কোমল ফোটে। সেই যে আমার মা, যার হয়না তুলনা।
মা কখনো হয়না পর যতই আসুক তুফান ঝড় অন্যের ভালোবাসা হতে পারে ছলনা
কিন্তু মা এর ভালোবাসা পৃথিবীর
কোন কিছুর সাথে হয়না তুলনা.
মা মানে মমতা, মা মানে ক্ষমতা, মা মানে নিরাপত্তা, মা মানে নিশ্চয়তা, মা মানে আশ্রয়দাতা, মা মানে সকল আশা, মা মানে একবুক ভালোবাসা।
মাকে নিয়ে কবিতা
‘মা’
-কাজী নজরুল ইসলাম
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে র’ন নাহি খেয়ে,
শত দোষী তবু মা তো তাজে না।
ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোট বুক
যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরাম-হীন
দোলা দেয় শুধাতেন, ‘কি হোলো খোকন?’
আহা সে কতই রাতি
শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু আসুখ হলে জাগেন মাতা,
সব-কিছু ভুলে গিয়ে
কেবল আমায়ের নিয়ে
কত আকুলতা যেন জাগন্মাতা।
যখন জন্ম নিনু
কত আসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক-
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছু পিছু।
তখন সে মা আমার
চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত
আমার কি ব্যথা হোতো,
বল কে ওমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়।
তারপর কত দুখে
আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়,
কত না সে সুন্দর
এ দেহে এ অন্তর
সব মোর ভাই বোন হেথা যত পড়।
পাঠশালা হ’তে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি’ নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’
পড়া লেখা ভাল হ’লে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে।
বলে, ‘মোর খোকামনি!
হীরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে।
গা’টি গরম হলে
মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে, ‘ওরে যাদু কি হয়েছে বল’।
কত দেবতার ‘থানে’
পীরে মা মানত মানে-
মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল।
যখন ঘুমায়ে থাকি
জাগে রে কাহার আঁখি
আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম।
তাই কত ছড়া গানে
ঘুম-পাড়ানীরে আনে,
বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম’।
দিবানিশি ভাবনা
কিসে ক্লেশ পাব না,
কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে;
বুক ভ’রে ওঠে মা’র
ছেলেরি গরবে তাঁর,
সব দুখ হয় মায়ের আশিসে।
আয় তবে ভাই বোন,
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা’র;
মা’র বড় কেহ নাই-
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!
‘পল্লী জননী’
– জসীম উদ্দীন
রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বিসয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।
ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?
ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।
ছেলে কয়, “মারে, কত রাত আছে? কখন সকাল হবে,
ভাল যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে?”
মা কয়“বাছারে ! চুপটি করিয়া ঘুমা ত একটি বার, ”
ছেলে রেগে কয় “ঘুম যে আসে না কি করিব আমি তার ?”
পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা, সারা গায়ে দেয় হাত,
পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাথ।
নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় মানে দান,
ছেলেরে তাহার ভাল কোরে দাও, কাঁদে জননীর প্রাণ।
ভাল করে দাও আল্লা রছুল। ভাল কোরে দাও পীর।
কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর।
বাঁশবনে বসি ডাকে কানা কুয়ো, রাতের আঁধার ঠেলি,
বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারীর বন হেলি।
চলে বুনোপথে জোনাকী মেয়েরা কুয়াশা কাফন ধরি,
দুর ছাই। কিবা শঙ্কায় মার পরাণ উঠিছে ভরি।
যে কথা ভাবিতে পরাণ শিহরে তাই ভাসে হিয়া কোণে,
বালাই, বালাই, ভালো হবে যাদু মনে মনে জাল বোনে।
ছেলে কয়, “মাগো! পায়ে পড়ি বলো ভাল যদি হই কাল,
করিমের সাথে খেলিবারে গেলে দিবে না ত তুমি গাল?
আচ্ছা মা বলো, এমন হয় না রহিম চাচার ঝাড়া
এখনি আমারে এত রোগ হোতে করিতে পারি ত খাড়া ?”
মা কেবল বসি রুগ্ন ছেলের মুখ পানে আঁখি মেলে,
ভাসা ভাসা তার যত কথা যেন সারা প্রাণ দিয়ে গেলে।
“শোন মা! আমার লাটাই কিন্তু রাখিও যতন করে,
রাখিও ঢ্যাঁপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরি শিকা পরে।
খেজুরে-গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়ুমের কোলা ভরে,
ফুলঝুরি সিকা সাজাইয়া রেখো আমার সমুখ পরে।”
ছেলে চুপ করে, মাও ধীরে ধীরে মাথায় বুলায় হাত,
বাহিরেতে নাচে জোনাকী আলোয় থম থম কাল রাত।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া কত কথা পড়ে মনে,
কোন দিন সে যে মায়েরে না বলে গিয়াছিল দুর বনে।
সাঁঝ হোয়ে গেল আসেনাকো আই-ঢাই মার প্রাণ,
হঠাৎ শুনিল আসিতেছে ছেলে হর্ষে করিয়া গান।
এক কোঁচ ভরা বেথুল তাহার ঝামুর ঝুমুর বাজে,
ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়াছিলি এমনি এ কালি-সাঁঝে?
কত কথা আজ মনে পড়ে মার, গরীবের ঘর তার,
ছোট খাট কত বায়না ছেলের পারে নাই মিটাবার।
আড়ঙের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,
বলেছে আমরা মুসলমানের আড়ঙ দেখিতে নাই।
করিম যে গেল? রহিম চলিল? এমনি প্রশ্ন-মালা;
উত্তর দিতে দুখিনী মায়ের দ্বিগুণ বাড়িত জ্বালা।
আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি, ওষুধ হয়নি আনা,
ঝড়ে কাঁপে যেন নীড়ের পাখিটি জড়ায়ে মায়ের ডানা।
ঘরের চালেতে ভুতুম ডাকিছে, অকল্যাণ এ সুর,
মরণের দুত এল বুঝি হায়। হাঁকে মায়, দুর-দুর।
পচা ডোবা হতে বিরহিনী ডা’ক ডাকিতেছে ঝুরি ঝুরি,
কৃষাণ ছেলেরা কালকে তাহার বাচ্চা করেছে চুরি।
ফেরে ভন্ ভন্ মশা দলে দলে বুড়ো পাতা ঝরে বনে,
ফোঁটায় ফোঁটায় পাতা-চোঁয়া জল গড়াইছে তার সনে।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা।
সম্মুখে তার ঘোর কুজঝটি মহা-কাল-রাত পাতা।
পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেলা,
আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।
‘কত ভালবাসি’
–কামিনী রায়
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
“মা, তোমারে কত ভালোবাসি!”
“কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।
“এ-ত।” বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।
“তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?”
মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”
“তবু কতখানি, বল।”
“যতখানি ধরে
তোমার মায়ের বুকে।”
“নহে তার পরে?”
“তার বাড়া ভালবাসা পারি না বাসিতে।”
“আমি পারি।” বলে শিশু হাসিতে হাসিতে!
‘কখনো আমার মাকে’
– শামসুর রাহমান
কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।
যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর
সংসারেও এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।
যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে!