পিরিয়ডের ব্যাথার কারণ

পিরিয়ডে পেট ব্যাথা নারিদের একটি প্রচলিত সমস্যা। কখনো কখনো এই ব্যাথা সহ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। এই ব্যাথার জন্য নারীদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ করতে ব্যাহত হয় এ ব্যাথা এতটাই ব্যাথা অনেকে সহ্য করতে পারে না। এবং তারা তাদের প্রয়োজনীয় কাজও করতে পারে না, পড়াশোনা করতে সমস্যা হয়। প্রায় মেয়েরাই এই ব্যাথার শিকার। পিরিয়ডের এই ব্যাথাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় DYSMENORRHEA বলা হয়।
এই DYSMENORRHEA কে চিকিৎসা বিজ্ঞান দুটি স্টেপে ভাগ করেছে।
১। Primary dysmenorrhea.
২। Secondary dysmenorrhea.
যে সকল নারীদের কেবল পিরিত চক্র শুরু হয়েছে অর্থাৎ ১৫ থেকে ২৫ বয়সে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ব্যাথার শিকার তাকে Primary dysmenorrhea বলা হয় ।
৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী অথবা এর উর্ধ্বে নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময় ব্যাথার স্বীকার থাকে তাকে Secondary dysmenorrhea বলে।
যাদের কেবল নতুন পিরিয়ড চক্র শুরু হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যাথাটা প্রচন্ড আকার ধারণ করে। তাই তারা অনেক ভয়ে থাকে যদি ব্যাথা শুরু ১ম দিন থেকে ২৪ ঘন্টার মতো ব্যাথাটা স্থায়িত্ব থাকে। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে নারীদের ব্যাথাটা কম থাকে। পিরিয়ডের এই ব্যাথার পিছনে কিছু কারণ বিদ্যমান । যেমন ১৫ থেকে ২৫ বয়সী নারীদের শরীর থেকে পিরিয়ডের দূষিত ব্লাড গুলো বের হতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা পায়, যা এই পেট ব্যাথার অন্যতম কারণ। নারীদের যখন প্রথম পিরিয়ড চক্র শুরু হয় তখন থেকেই তার ডিম্বাণু তৈরি হতে থাকে। এই ডিম্বাণ গুলো গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। শুক্রাণুর অনুপস্থিতিতে ডিম্বাণ গুলো ক্রমানুগত ভাবে নষ্ট হতে থাকে। এই ডিম্বাণুগুলো নষ্ট হওয়ায় ১৫ থেকে ২৫বছর বয়সী নারীদের পেট ব্যথার মূল কারণ। একবার সন্তান প্রসব করার পর এই ব্যাথাটা আর থাকেনা। আবার অতিরিক্ত চিন্তা পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার কারণেও পেট ব্যাথা হয়ে থাকে। পেট ব্যাথা হয়ে থাকে তাহলে সেটা অস্বাভাবিক তখন ভাল ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কারণ তার শরীরের মধ্যে অন্য কোন রোগ আছে। আর তার কারন-ই পেট ব্যাথা।
পিরিয়ডের ব্যাথার প্রতিকার
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক মেয়েরই উচিত কিছু নিয়ম মেনে চলা।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১। গরম পানি দিয়ে গোসল করা ।
২। গরম পানি পান করা।
৩। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
৪। কাঁচা পেঁপে খাওয়া।
৫। পেটে চেক দেওয়া।
৬। আদার রস গরম পানিতে মিশে খাওয়া।
৭। অ্যালোভেরার রস ও মধু দিয়ে জুস তৈরি করে কয়েকবার খাওয়া।
৮। বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া।
৯। ভারী ও শক্তি দায়ক কাজ না করা।
১০। দৌড়াদৌড়ি ও বেশি হাঁটাহাঁটি না করা।
পিরিয়ডের ব্যাথার প্রাথমিক চিকিৎসা
মেয়েদের পিরিয়ডে ব্যাথা হবে এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। পিরিয়ডে ব্যাথা নেই এমন মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। তবে এর প্রাথমিক চিকিৎসা রয়েছে যা করলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
নিচে পিরিয়ডের ব্যাথার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
আদার রস
ব্যাথার জন্য আদার রস খুবই কার্যকরী একটা উপাদান। শুধু পিরিয়ডের ব্যাথা না পেটে যে কোন ব্যাথা হলে আদার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে কয়েকবার খেলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অ্যালোভেরা ও মধু
অ্যালোভেরার রস বের করে তার সাথে মধু মিশিয়ে জুস তৈরি করে দিনে কয়েকবার খেলে ব্যাথা কমে যায়।
গরম পানি
কুসুম গরম পানি পিরিয়ডের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেক মেয়ের উচিত পিরিয়ড সময়ে হালকা কুসুম গরম পানি পান করা। এবং হট ব্যাগে গরম পানি ভরে তা পেটে চেক দিলে ব্যাথা কমে যায়।
রসুন
আদিকাল থেকে রসুনের ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে। ব্যাথা কমাতে রসুনের তুলনা নেই। শুধু পিরিয়ডের ব্যাথা না পেটে ব্যাথা ,হাঁটু ব্যাথা, কোমর ব্যাথা ,হাত ব্যথা, পা ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা ,পায়ের গোড়ালি ব্যাথা যে কোন ধরনের ব্যাথা কমাতে রসুনের ব্যবহার অতুলনীয়। রসুনের খোসা ছাড়িয়ে কয়েকটি রসুন আধা সেসা করে সরিষার তেলের মধ্যে দিয়ে ভালো করে গরম করতে হবে তারপর ওই তেল ব্যাথার স্থানে আসতে আসতে করে ম্যাসাজ করতে হবে এতে দুই মিনিটের মধ্যে ব্যাথা কমে যায়।