স্বাস্থ্য

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসার কারণ

অবস্থায় মায়েদের অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, শরীর দুর্বলতা, খাবারে অরুচি এবং পায়ে পানি আসা, অতিরিক্ত পা ফুলে যাওয়া। সাধারণত নারীদের গর্ভধারণের পাঁচ মাস পর থেকে পা ফুলে যাওয়া এবং পায়ে পানি আসা এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ গর্ভবতীই গর্ভকালীন সময়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। স্বাভাবিক শরীরবৃত্তিও কারণে এমন হয়। এই পা ফুলে যাওয়াটা একটা সাধারণ বিষয়। গর্ভকালীন সময়ে অধিকাংশ নারীর এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এতে ভয়ের কিছু নেই। যারা এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা, তারা ভয় পেয়ে যায়। একজন মা যখন গর্ভবতী হয়, তখন তার গর্ভের শিশুটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কথাই বলা যায় যে, গর্ভাবস্থায় হরমোন এবং শিশুর বৃদ্ধির কারণে রক্তনালীর উপর ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে থাকে এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমতে থাকে এবং সে জায়গা ফুলে যায়।

গর্ভের শিশু যখন সে বড় হতে থাকে তার মাথার চাপে গর্ভধারিনী মায়ের নিচের যে শীরা গুলো দিয়ে রক্ত হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করার কথা তাতেই সাধারণত বিঘ্ন ঘটে। যা বাধা প্রাপ্ত হয় রক্তনালী থেকে পানি বাইরে বেরিয়ে আসে। আর এটাই হলো গর্ভাবস্থায় পা ফুলে গিয়ে পায়ে পানি আসার প্রধান কারণ। গর্ভবতী নারীর হাঁটা চলা করতে খুবই সমস্যা হয়। যেসব গর্ভকালীন মায়ের শরীরে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত আছে তাদের এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আর এটা শুধু পায় না শরীরের যে কোনো অংশে জমতে পারে। যেমন পায়ের গোড়ালি, হাত ও পায়ে বেশি হয়। মাঝে মাঝে ঘাট ও মুখেও ওই ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে এটাকে বলা হয় এডিমা। এটি অনেক গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়। আরেকটা বিষয় হল গর্ভকালীন সময়ে অধিকাংশ মহিলাদের এই পায়ে পানি এসে পা ফুলে যায় কিন্তু পানি আসাটা স্বাভাবিক। এর সাথে যদি হাতে ও মুখে পানি আসে, রক্তচাপ বেশি থাকে এবং প্রস্রাবে এলবুমিন বা প্রোটিনের আধিক্য থাকে বা প্রসাবের সাথে বেরিয়ে যায় তাহলে সেটা গর্ভকালীন প্রি- একলাম্পসিয়ার লক্ষণ, আর এটা চিন্তার বিষয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পানি আসলে করনীয়

প্রচুর পানি পান করুন:

গর্ভাবস্থায় বেশি করে পানি পান করলে তা শরীর থেকে সব টক্সিন পদার্থ শরীর থেকে বের করে আনতে সহায়তা করে। ফলে ঘন ঘন প্রসাব আসে, এর ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানিও বের হয়ে যায়। এতে শুধু পা-ই না যেমন পায়ের গোড়ালি ফোলা এবং মুখের ফোলা ভাব কমিয়ে দেয় বা বিভিন্ন অংশের ফোলা ভাব কমিয়ে দেয়।

অনেক সময় পা ঝুলিয়ে বসে থাকা পরিহার করতে হবে:

গর্ভাবস্থায় অনেক সময় পা ঝুলিয়ে বসে থাকা যাবে না আর যাদের এই পা ফুলে-পায় পানি আসে তাদের তো আরো যাবে না। এতে পা ফুলে যাওয়ার পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। তাই দীর্ঘ সময় পা ঝুলে বসে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে।

অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা:

গর্ভাবস্থায় একই সময় ধরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এতে শরীরের নিচের দিকে জলীয় অংশ বেশি প্রবাহিত হতে পারে যার ফলে পা আরো বেশি ফুলে উঠতে পারে।

লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া:

গর্ভাবস্থায় পা ফোলা থেকে রেহাই পেতে লবন খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। কারণ লবণ শরীরে পানি ধরে রাখতে। তাই বলে একেবারেই লবন খাওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়। কারন শরীর সঠিক রূপে চালনা করতে লবনের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের প্রয়োজন রয়েছে।

সুষম খাদ্য গ্রহণ:

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য ও পা ফেলাতে সাহায্য করে। খাদ্যের মধ্যে সকল প্রকার উপাদান রয়েছে সুষম খাদ্য তাই শুধু গর্ভকালীন অবস্থা না প্রত্যেক বয়সী প্রত্যেক সময়েই আমাদের প্রত্যেক মানুষের উচিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।

দিলে ঢালা পোশাক পরিধান করা:

পা ফুল অবস্থায় হাসি পায়ের টাইট ফিটিং সালোয়ার বা জিন্স পরলে তা পায়ের উপর চাপ পড়ে। এটি পা ফোলা আরো বাড়িয়ে তোলে। তাই টাইপ পোশাক পড়া এড়িয়ে চলতে হবে।

একই সময় ধরে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকা যাবে না:

গর্ভাবস্থায় একই জায়গায় অনেকক্ষণ ধরে একই ভাবে শুয়ে থাকা যাবে না। ঘুরে ফিরে এপাশ ওপাশ অথবা জায়গা বদল করে শুয়ে থাকতে হবে। একইভাবে এক জায়গায় অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকলে তার শরীরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পানি জমে যার ফলে সে অংশটা ফুলে যায় অথবা ফোলা জায়গা আরো বেশি করে ফুলে যায়। তাই একইভাবে শুয়ে বা বসে না থেকে কিছুক্ষণ পর পর জায়গা পরিবর্তন করুন। হঠাৎ করে যদি শরীরে অতিরিক্ত পানি আসে, তখন পানি জমে জমে ত্বকে শক্ত ভাব আসতে পারে। আমি জমার স্থানে যদি ব্যথা হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ কখনো কখনো এগুলো গর্ভকালীন সময়ের জটিলতার লক্ষণও হতে পারে। তাদের প্রসাবে সংক্রমণ কিংবা উচ্চ রক্তচাপ না হয়ে থাকলে পানি জমা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আর অস্বাভাবিক লক্ষণ গুলো দেখা দিলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, চিকিৎসক কিভাবে চলতে বলে সেভাবে চলতে হবে।

যেসব অবস্থা শরীরে পানি আসা কে প্রভাবিত করে:

  • দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা।
  • গরম আবহাওয়ায় ঘোরাফেরা।
  • সারাদিন যাবত দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রম করা।
  • খুব বেশি মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ করা।
  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়া।
  • ডায়েটে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকা।
  • প্রতিনিয়ত ক্যাফিন জাতীয় পানীয় পান করা।

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসার প্রতিকার:

গর্ভাবস্থাকালীন ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ মহিলারে পা ফোলা ও পায়ে পানি আসা এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই ধরনের সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই প্রতিরোধ করা যায়। যা যে কেউ ঘরে বসে এবং কিছু নিয়ম আছে এগুলো লক্ষ্য করে চলতে পারলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অনেক দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে আরো বাড়ে তাই অফ ফলা কমানোর জন্য অনেক দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। অনেক সময় ধরে আছে বসে থাকা যাবে না। বসে থাকলে পা ফোলা ভাবটা আরো বেশি বেড়ে যায় তাই পা ঝুলে বসা পরিহার করতে হবে এবং যদি ঝুলিয়ে বসতে হয় সেক্ষেত্রে পায়ের নিচে একটি টুল দিয়ে টুলের উপর পা রেখে তারপর ঝুলিয়ে বসতে হবে যেন পাটা অবস্থায় না থাকে। অতিরিক্ত গরম শরীরের না লাগানো যেখানে গরম সেই জায়গা থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সব সময় দিলে ঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে। অনেক শক্ত এবং উঁচু জুতা না পরা সবসময় নরম এবং নিচু জুতা পরা। অনেক সময় ধরে এভাবে শুয়ে থাকবেন না কিছুক্ষণ পর পর এপাশ ওপাশ অথবা জায়গা পরিবর্তন করুন এবং শুয়ে থাকার সময় পায়ের নিচে অবশ্যই বালিশ দিতে হবে।

নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং খাবার খেতে সমস্যা হলে চেষ্টা করতে হবে সঠিকভাবে খাবার খাওয়ার। লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে লবণ খেতে হবে তবে পরিমাণ মতো অতিরিক্ত না। পায়ের যে স্থানে ফুলে পানি জমে আছে সেই স্থানে সেট নেয়া যেতে পারে এবং ম্যাসাজ করা যেতে পারে। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে অথবা ক্যালসিয়াম ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। করতে হবে গর্ভকালীন সময়ে একটা কাজ করতেই হবে সেটা হল পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা এটা পায়ে পানি জমে থাকলেও করতে হবে পানি না জমলেও এই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। কারণ পানি শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এগুলো হলো ঘরোয়া চিকিৎসা।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তখনই যখন কোন গর্ভবতী নারীর সাধারণত পা না ফুলে মুখমন্ডল ঘার এবং চোখের নিচে অতিরিক্ত ফুলে যায়, নিজে থেকেই পায়ের গোড়ালি পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া। হাত গুলো মারাত্মকভাবে ফুলে যাওয়া। প্রেসার বেশি বা উচ্চ রক্তচাপ হওয়া। মাথা ঘোরা ও চোখে ঝাপসা দেখাও। প্রসাবের সাথে এলবুমিন বা প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া। হঠাৎ শরীরে খুব বেশি পানি এলে পানি জমে জমিয়ে ত্বকে শক্ত ভাব চলে আসতে থাকলে, পানি জমার স্থানে ব্যথা হলে। উভয় পায়ের মধ্যে কিংবা কোন একটি কিংবা উভয় পায়ে যদি বেশি ফুলে যায়, এবং উরু বা থাইয়ে যদি যন্ত্রণা বা নমনীয়তা দেখা দেয়। এটি রক্ত জমাট বাঁধার একটি লক্ষণ হতে পারে এরকম হলে চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে অতি জরুরী। না হলে গর্ভবতী মা ও সন্তানের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

Jahidul Islam

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button