
কলা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে যেকোনো সময় হালকা ক্ষুধা মেটাতে কলার কোনো জুড়ি নেই। কিন্তু শুধু উপকারিতা জানলেই তো চলবে না, কলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আমাদের জন্যে জানা সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিকভাবে না খেলে যেকোনো ভালো খাবারই শরীরে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কলায় থাকা ভিটামিন, মিনারেল উপাদান কীভাবে কাজে লাগে, আর কখন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, এসব বিষয়ে আমাদের একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন।
সূচীপত্রঃ
বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই, ইনফো ভান্ডারের আজকের লেখায় আমরা জানবো, কলার উপকারিতা ও অপকারিতা, কলার পুষ্টিগুণ, রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা, সাগর কলা খাওয়ার উপকারিতা থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল তথ্য। তাহলে শুরু করা যাক!!!
কলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
কলার খাওয়ার উপকারিতা লুকিয়ে আছে এর পুষ্টিগুণে। একটি মাঝারি মাপের কলায় থাকে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে বিভিন্নভাবে শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষ করে কলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বলতে গেলেই প্রথমে আসে এর এনার্জি বুস্ট করার ক্ষমতার কথা। দ্রুত শক্তি পেতে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার কাছেই কলা অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার।
কলায় থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং ভিটামিন বি৬ মুড ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। নিয়মিত পরিমাণমতো কলা খেলে হৃদ্স্বাস্থ্য ভালো থাকে যা নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা এর একটি বড় দিক।
সাগর কলা, বিচি কলা বা পাকা কলা জাতভেদে পুষ্টিগুণ কিছুটা ভিন্ন হলেও সামগ্রিকভাবে সব ধরনের কলাই শরীরকে শক্তি, পুষ্টি প্রদান করে। তাই কলার উপকারিতা ও অপকারিতা বুঝে সঠিক পরিমাণে কলা খেলে তা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সেরা ৫টি কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা এমন একটি ফল, যা খুব দ্রুত আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে কলা খেলে যেসব বড় উপকার পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি দিক এখানে তুলে ধরা হলোঃ
১) হজমশক্তি বৃদ্ধি
কলার ফাইবার বা খাদ্যআঁশ আপনার পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। যারা হজম সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য কলা খাওয়া বেশ উপকারী।
২) হৃদপিন্ডকে ভালো রাখে
কলায় থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। এদিক থেকে বাংলা কলার উপকারিতা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।
৩) দ্রুত শক্তি জোগায়
শরীর ক্লান্ত লাগলে একটি পাকা কলা মুহূর্তেই এনার্জি ফিরিয়ে আনতে। খেলাধুলা বা ব্যায়ামের আগে ও পরে অনেকেই কলা খেতে পছন্দ করেন।
৪) মানসিক চাপ কমায়
কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ট্রিপ্টোফ্যান থাকে, যা আমাদের মুড ভালো রাখতে, টেনশন কমাতে এবং সহজে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কলা
ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে। এভাবে কলা খাওয়ার উপকারিতা শরীরের বিভিন্ন অংশে নানা ভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, আর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে চাইলে প্রথমেই এর এই ইতিবাচক দিকগুলোও আমাদের নজরে আসে।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের অনেকেই ভাবেন রাতে কলা খাওয়া ঠিক কি না। আসলে পরিমিত পরিমাণে রাতে একটি পাকা কলা খাওয়া বেশ উপকারী হতে পারে আপনার জন্যে। কারণ কলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ট্রিপ্টোফ্যান শরীরকে রিল্যাক্স করে এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিন তৈরি বাড়ায়, যা ঘুম ভাল করতে সহায়তা করে।
তবে যাদের অম্বল, গ্যাস বা bloating-এর সমস্যা আছে, তাদের রাতে কলা খাওয়ার আগে সতর্ক থাকাই ভালো। পরিমাণের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখলেই কলার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাগর কলা আকারে বড় এবং তুলনামূলক বেশি মিষ্টি হওয়ায় এতে ক্যালরি ও প্রাকৃতিক চিনি দুটোই বেশি থাকে। ফলে দ্রুত শক্তি পেতে বা শরীর ক্লান্ত হলে সাগর কলা বেশ উপকারী। এতে পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬–এর পরিমাণও উল্লেখযোগ্য, যা হৃদপিন্ডকে এবং স্নায়ুকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই কারণেই সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই এর শক্তিবর্ধক দিকটিই বেশি উল্লেখযোগ্য।
তবে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য সাগর কলা সীমিত পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত সাগর কলা খেলে আপনার রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। তাই সাগর কলার সুফল পেতে পরিমিত পরিমাণেই খান।
বিচি কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
বিচি কলা স্বাদে কিছুটা আলাদা কিন্তু পুষ্টিতে আবার ভরপুর। এতে সাধারণ পাকা কলার তুলনায় খাদ্যআঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিছুটা বেশি থাকে, যা আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত অল্প পরিমাণে বিচি কলা খেলে পেট পরিষ্কার থাকে।
তবে অতিরিক্ত খেলে কখনও কখনও পেট ভারী লাগা, গ্যাস কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। বিশেষ করে বিচির কারণে হজম ধীর হয়ে যেতে পারে। পরিমিত পরিমাণে খেলেই এর আসল উপকার পাওয়া সম্ভব
পাকা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
পাকা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা বলতে গেলে প্রথনেই বলতে হয়, পাকা কলা সহজে হজম হয় এবং শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। তাই ক্লান্তি দূর করা কিংবা ক্ষুধা মেটানোর জন্য এটি খুবই কার্যকর। ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এজন্য পাকা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে এর দ্রুত এনার্জি দেয়ার কথাটা। নিয়মিত পরিমাণমত বিচি পাকা কলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ইমিউনিটি বৃদ্ধি এবং হজমশক্তি উন্নত হয়।
তবে পাকা কলায় চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা কলা খাওয়ার পরিমাণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়া, গ্যাস বা bloating-এর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই অন্য সব কলার মতোই পাকা কলাও খেতে হবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে।
কলা খাওয়ার অপকারিতাঃ যারা সাবধানে খাবেন

যদিও কলা একটি স্বাস্থ্যকর ফল, তবুও অতিরিক্ত খেলে কিছু অপকারিতাও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য বেশি পটাশিয়াম শরীরে জমে গিয়ে হাইপারক্যালেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে কলা খাওয়ার পর গ্যাস, অম্বল বা bloating-এর সমস্যা দেখা দেয়, যা আবার আপনার হজমের অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ Pizza Hut বিকাশ পেমেন্ট ক্যাশব্যাক অফার
পাকা কলায় প্রাকৃতিক চিনির মাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে কলা খাওয়া জরুরি। অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে আবার ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকে।
এ কারণে কলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই মাথায় রেখে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। বাংলা কলার উপকারিতা অনেক হলেও নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিলেই কলা হবে আপনার জন্যে সত্যিকারের স্বাস্থ্যকর খাবার।
উপসংহার
কলা এমন একটি ফল, যার উপকারিতা অসংখ্য, হজমশক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে হৃদপিন্ডের সুরক্ষা, শক্তি যোগানো ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি সব ক্ষেত্রেই এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তবে সব ভালো কিছুর মতোই কলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে, এবং এই দু’দিক বুঝে পরিমিত পরিমাণে খেলে তবেই এর আসল সুফল পাবেন আপনি। সাগর কলা, বিচি কলা বা পাকা কলা সব ধরনের কলারই আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে কলা খেলে এটি স্বাস্থ্যকর জীবনের একটি সহজ কিন্তু প্রাকৃতিক সহায়ক হয়ে ওঠতে পারে আপনার জন্যে।
পরিশেষে, ইনফো ভান্ডারের আজকের আর্টিকেলে আমরা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত যাবতীয় প্রায় সকল কিছুই জানলাম। আশা করি প্রিয় পাঠক “কলার উপকারিতা ও অপকারিতা” নিয়ে প্রায় সকল তথ্যই ভালোভাবেই জানতে পেয়েছেন আমাদের আজকের এই লেখা থেকে!
সবশেষে, আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে পাঠকের। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে অনুরোধ থাকবে এই ব্লগ পোস্টটি প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে নিজের মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু! আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোনো এক লেখায়!




