বিজ্ঞানশিক্ষা

কোষ বিভাজন কাকে বলে ? কত প্রকার ও কী কী?

আমরা সবাই জানি মোটামুটি, সব জীবদেহের মূল গঠন কোষ দিয়েই তৈরি। একটি ক্ষুদ্র কোষ থেকেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় হাজার হাজার কোষের একটি সম্পূর্ণ প্রাণীদেহ। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক কোষ কোথা থেকে আসে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায়, যার নাম কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া। জীবের বৃদ্ধি, ক্ষয় পূরণ, পুরোনো কোষের জায়গায় নতুন কোষ তৈরি সবকিছুর পেছনে রয়েছে এই প্রক্রিয়াটিই। তাই খুবই স্বাভাবিকভাবে পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আসলেই কোষ বিভাজন কাকে বলে এবং এটি কীভাবেই বা আসলে কাজ করে?

আপনি জেনে অবাক হবেন হয়ত, এই প্রক্রিয়াটি শুধু দেহের বৃদ্ধি নয়, বংশবিস্তার এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও অপরিহার্য। একটি একক কোষ যখন নিজেকে ভাগ করে দুটি নতুন বা অপত্য কোষ সৃষ্টি করে, তখন দেহের কোষসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং প্রাণীদেহ আকারে বড় হতে থাকে। কোষ বিভাজনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ বিভাজন, সমীকরণিক বিভাজন (মাইটোসিস) এবং হ্রাসমূলক বিভাজন (মিয়োসিস)। প্রতিটি বিভাজন-পদ্ধতির নিজস্ব ভূমিকা আছে, যা জীবনের ধারাবাহিকতাকে টিকিয়ে রাখে নিজ নিজ জায়গা থেকে।

বুঝতেই পারছেন, ইনফো ভান্ডারের আজকের এই লেখায় আমরা কোষ বিভাজন কাকে বলে ? , কোষ বিভাজন কত প্রকার ও কী কী?, কোষ বিভাজন কিভাবে ঘটে? থেকে শুরু করে কোষ বিভাজন নিয়ে হাবিজাবি সবকিছুই জানবো। তাহলে শুরু করা যাক??

কোষ বিভাজন কাকে বলে ?

সহজ ভাষায় কোষ বিভাজন কাকে বলে ? বলতে গেলে বলা যায়, একটি পরিণত কোষ যখন নিজেকে দুটি বা তার বেশি নতুন কোষে ভাগ করে, সেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকেই কোষ বিভাজন বলা হয়। জীবন্ত প্রাণীর দেহে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি বা পুরোনো কোষের পরিবর্তে নতুন কোষ তৈরির একমাত্র উপায় হলো এই বিভাজন। তাই জীবন টিকিয়ে রাখতে কোষ বিভাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।

কোষ বিভাজনের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো অ্যামাইটোসিস, যাকে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলা হয়। অনেকেই এখন জানতে চাইতে পারেন, অ্যামাইটোসিস কাকে বলে  বা অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে আবার? উত্তরে বলা যায়, এটি হলো এমন একটি সরল প্রক্রিয়া যেখানে নিউক্লিয়াস কোনো বিশেষ ধাপ ছাড়াই সরাসরি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ আইসোটোপ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কী কী?

অন্যদিকে দেহের সাধারণ কোষগুলো বেশিরভাগ সময় সমীকরণিক কোষ বিভাজন বা মাইটোসিসের মাধ্যমেই বিভাজিত হয়। এখানে নতুন কোষগুলো পূর্বের কোষের মতো সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বজায় রাখে। তাই এটি জীবের বৃদ্ধি ও দেহসংস্কারের প্রধান মাধ্যম।

সব মিলিয়ে, কোষ বিভাজন এমন একটি প্রক্রিয়া যা ছাড়া কোনো জীবের অস্তিত্বই সম্ভব নয়।

কোষ বিভাজন কত প্রকার?

কোষ বিভাজন কাকে বলে

কোষ বিভাজন কত প্রকার? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, মূলত কোষ বিভাজন তিন ধরনের হয়ে থাকেঃ অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস। প্রতিটি ধরনের বিভাজনে প্রক্রিয়াগত পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য একই, নতুন কোষ সৃষ্টি।

সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়া হলো অ্যামাইটোসিস, যাকে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজনও বলা হয়। এতে নিউক্লিয়াস কোনো বিশেষ ধাপ ছাড়াই সরাসরি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। তাই এটিকে অনেকে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে ? এর উত্তর হিসেবে উল্লেখ করে।

অপরদিকে দেহের সাধারণ বৃদ্ধিতে কাজ করে সমীকরণিক কোষ বিভাজন, অর্থাৎ মাইটোসিস। এতে নতুন কোষগুলো পূর্বের কোষের মতোই থাকে এবং ক্রোমোজোম সংখ্যাও আগের মতোই থাকে অর্থাৎ অপরিবর্তিত থাকে।

আরও পড়ুনঃ বৃত্ত কাকে বলে ? বৃত্তের বৈশিষ্ট্য ও এর গঠন [2025 Updated]

অন্যদিকে প্রজনন কোষ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মিয়োসিস, যেখানে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। জীববৈচিত্র্য ও বংশবিস্তারে এই বিভাজন বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে ?

কোষ বিভাজন কাকে বলে

অ্যামাইটোসিস হলো কোষ বিভাজনের সবচেয়ে সহজ ও প্রাচীন পদ্ধতি। অনেকেই জানতে চান, অ্যামাইটোসিস কাকে বলে বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে? সহজভাবে বলা যায়, অ্যামাইটোসিস হলো এমন এক ধরনের কোষ বিভাজন যেখানে নিউক্লিয়াস কোনো বিশেষ ধাপ বা জটিল পর্যায় ছাড়াই সরাসরি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোষ সাধারণত খুব দ্রুতগতিতে ভাগ হয় এবং এতে মাইটোটিক স্পিন্ডলের মতো কোনো কাঠামো তৈরিই হয় না বা বলা যায় দরকারই পড়ে না।

অ্যামাইটোসিস সাধারণত নিম্নস্তরের জীব বা খুব সহজ গঠনের কোষে দেখা যায়। কিছু বিশেষ টিস্যু, যেমন ক্ষত সারানোর সময় কিছু প্রাণীদেহে দ্রুত কোষ তৈরি করার প্রয়োজন হলে এমন প্রত্যক্ষ বিভাজন ঘটতে পারে। যেহেতু এখানে ক্রোমোজোমের সুনির্দিষ্ট বিন্যাস বা ধাপভিত্তিক পরিবর্তন দেখা যায় না, তাই এই প্রক্রিয়াটিকে অন্যান্য বিভাজনের তুলনায় অনেক সহজ। সব মিলিয়ে, অ্যামাইটোসিস হলো কোষ বিভাজনের দ্রুততম এবং সবচেয়ে মৌলিক রূপ মাত্র।

মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে ?

কোষ বিভাজন কাকে বলে

মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে ? এটি জীববিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। সমীকরণিক বিভাজন বলতে এমন একটি বিভাজনকে বোঝায় যেখানে মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে দুটি অভিন্ন নতুন কোষ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াকেই মাইটোসিস বলা হয়। যেহেতু নতুন কোষগুলো মাতৃকোষের মতো একই ক্রোমোজোমসংখ্যা বজায় রাখে, তাই একে সমীকরণিক বিভাজন নামেও অনে জায়গায় উল্লেখ করা হয়।

মাইটোসিস বেশ কয়েকটি ধাপে ঘটে, প্রোফেজ, প্রো-মেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ। প্রতিটি ধাপেই ক্রোমোজোমগুলো নির্দিষ্টভাবে সাজানো, পৃথক হওয়া এবং দুই কোষে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হয় প্রথমেই। এরপর এক পর্যায়ে পুরো কোষটিই বিচক্ত হয়ে যায়। দেহের বৃদ্ধি, টিস্যুর মেরামত এবং ক্ষত সারাতে মাইটোসিসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ূনঃ সেরা ৫ টি কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন (2025)

মিয়োসিস বিভাজন

কোষ বিভাজন কাকে বলে

হ্রাসমূলকবিভাজন বা মিয়োসিস হলো এমন একটি কোষ বিভাজন পদ্ধতি যেখানে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। যদিও এটি সমীকরণিক কোষ বিভাজনের মতো নয়, তবে জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মিয়োসিস সাধারণত প্রজনন কোষ বা গ্যামেট (ডিম্বাণু ও শুক্রাণু) তৈরির সময় ঘটে। এর ফলে প্রতিটি নতুন কোষে মাতৃকোষের তুলনায় অর্ধেক ক্রোমোজোম থাকে, যা পরবর্তী প্রজন্মে সঠিক জিনগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

মিয়োসিসের দুটি প্রধান ধাপ থাকে, মিয়োসিস-১ এবং মিয়োসিস-২। প্রথম ধাপে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়, আর দ্বিতীয় ধাপে ক্রোমাটিডগুলো পৃথক হয়ে চারটি নতুন কোষ তৈরি করে। জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের বিন্যাসে এই বিভাজন বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই কোষ বিভাজনের প্রকারভেদের তালিকায় মিয়োসিস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখলে রাখে সবসময়ই।

কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

কোষ বিভাজনের কারণে জীবদেহ সর্বদা সক্রিয় এবং সুস্থ থাকে। একটি কোষ দুটি নতুন কোষ সৃষ্টি করলে দেহের কোষসংখ্যা বাড়ে, পুরোনো বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষের জায়গায় নতুন কোষ তৈরি হয় এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে কাজ করতে পারে। সমীকরণিক কোষ বিভাজনের ফলে নতুন কোষগুলো পূর্বের কোষের মতোই গঠন ও বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে, যা দেহের স্থিরতা রক্ষা করে।

আরও পড়ুনঃ পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি । কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন

অন্যদিকে মিয়োসিস বিভাজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জিনগত বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে। এর ফলে সন্তান তার বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেও একদম একই রকম হয় না, এটাই জীববৈচিত্র্যের মূল শক্তি। এমনকি অ্যামাইটোসিসের মতো সরল বিভাজনও কিছু বিশেষ কোষে দ্রুত কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।

সব মিলিয়ে, কোষ বিভাজন জীবনের প্রতিটি স্তরে যেমন বৃদ্ধি, দেহের ক্ষয়পূরণ, বংশবিস্তারে অপরিহার্য এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা ছাড়া কোনো প্রাণীই বাঁচতে পারে না এবং পারবেও না।

কোষ বিভাজন কাকে বলে

কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয়তা

জীবদেহের প্রতিটি অংশই নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে, আর এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন হয় নতুন নতুন কোষের। পুরোনো বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষ যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন দেহ সেই জায়গায় নতুন কোষ তৈরি করে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাই দেহের বৃদ্ধি, টিস্যুর মেরামত এবং স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম বজায় রাখতে কোষ বিভাজন অপরিহার্য। এছাড়া জীবের বংশবিস্তারেও কোষ বিভাজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

কিছু কোষ প্রত্যক্ষ বিভাজন বা অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে দ্রুত ভাগ হয়ে সহজে নতুন কোষ তৈরি করে। আবার দেহকোষের সঠিক সংখ্যা ও গঠন বজায় রাখতে প্রয়োজন সমীকরণিক কোষ বিভাজন, যা দেহের জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। সব মিলিয়ে, জীবনধারণের প্রতিটি ধাপে কোষ বিভাজন এমন একটি মৌলিক প্রক্রিয়া যা প্রাণীকে সুস্থ ও কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করে।

উপসংহার

জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কোষ বিভাজন হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোর একটি। একটি কোষ থেকে দুটি নতুন কোষ তৈরি হওয়ার এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থা জীবের বৃদ্ধি, ও বংশবিস্তারের মূল চালিকাশক্তি। তাই কোষ বিভাজন কাকে বলে ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা  জানতে পারি, এটি শুধু একটি জৈবিক ধারণাই নয়, বরং জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষার মূল ভিত্তিও একই সঙ্গে।

পরিশেষে, ইনফো ভান্ডারের আজকের আর্টিকেলে আমরা কোষ বিভাজন কাকে বলে ? এ প্রশ্ন সম্পর্কিত যাবতীয় প্রায় সকল কিছুই জানলাম। আশা করি প্রিয় পাঠক “কোষ বিভাজন কাকে বলে ?” এ প্রশ্ন নিয়ে প্রায় সকল তথ্যই ভালোভাবেই জানতে পেয়েছেন আমাদের আজকের এই লেখা থেকে!

সবশেষে, আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে পাঠকের। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে অনুরোধ থাকবে এই ব্লগ পোস্টটি প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে নিজের মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু! আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোনো এক লেখায়!

M.A. Habib

আমি এ.এইচ. তূর্য, অজানাকে জানতে ও জানাতে ভালোবাসি। লেখা-লেখির প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক আগ থেকেই। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে "ইনফো ভান্ডার" সহ নিজস্ব কিছু সাইটে নিয়মিত লেখালেখির চর্চা করা হয়। পাঠককে সঠিক তথ্য দিয়ে উপকৃত করাই আমার এই শ্রমের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button