আজকের এই নিবন্ধ আলোচ্য বিষয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রচনা কবিতা প্রতিবেদন এবং গান। আপনি কি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কবিতা এবং গান অনলাইনে অনুসন্ধান করছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই নিবন্ধে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কবিতা বিজ্ঞান আলোচনা করতে যাচ্ছি।
1952 সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা জন্য জীবন দিয়েছে দেশের দামাল ছেলেরা। সেই সময় পাকিস্তান সরকার চেয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য। কিন্তু বাঙালিরা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাস্তায় নামে। সেই সময় ছাত্র-শিক্ষক শ্রমিক মজুর সবাই রাস্তায় নেমেছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তখন আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য 144 ধারা। ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে 144 ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ছাত্র সমাজ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্ররা 10 জনের দলে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন । কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নিশংস ভাবে গুলি করে সালাম-রফিক-বরকত সহ নাম না জানা অনেক কে গুলি করে শহীদ করে। ভাষা আন্দোলনের সেই সকল শহীদদের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কবিতা ২০২৩
সম্মানিত পাঠক, যথাযথ ভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর সহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আপনি যদি এই সকল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কবিতা অনুসন্ধান করেন তাহলে এই নিবন্ধ থেকে অনেকগুলো কবিতা সংগ্রহ করতে পারবেন।
“ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ, দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়! বরকতের রক্ত
হাজার যুগের সূর্যতাপে, জ্বলবে এমন লাল যে
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে, কৃষ্ণচূরার ডাল যে
প্রভাতফেরির মিছিল যাবে, ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে, তিতুমিরের কন্যা
চিনতে নাকি সোনার ছেলে, ক্ষুদিরামকে চিনতে?
রিদ্ধস্বাশে প্রাণ দিল যে, মুক্ত বাতাস কিনতে
পাহাড়তলীর মরণ চূরায়, ঝাঁপ দিলো যে অগ্নী
ফেব্রুয়ারীর শোকের বসন, পড়ল তারই ভগ্নী
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী, আমায় নেবে সঙ্গে?
মহাসমুদ্রের শতবতশরের কল্লল
কেহ যদি এমন করিয়া বাধিয়া রাখিতে পারিতো
যেন সে ঘুমন্ত শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত।
তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই কারাগাড়ের তুলনা হইতো।
এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে!, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে,
মানব আত্বার অমর আলোক
কালো অক্ষরের সৃঙ্খলে কাগজের কারাগাড়ে বাধা পড়িয়া আছে!
মনে পড়ে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারী,
লাখো বাঙালির কাতর চিত্তে করুন আহাজারি.
একুশ তুমি বাংলার মানুষের হৃদয় ভরা আশা,
তোমার কারণে পেয়েছি আজ কাঙ্খিত মাতৃভাষা.
রক্ত ঝরালো সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার,
বায়ান্নর সেই করুন কাহিনী মনে পড়ে বারবার.
স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে সেই বিষন্ন দিনের কথা,
যত ভাবি ততই যেন মনে পাই বড় ব্যথা.
প্রতিবাদে মুখর দৃঢ় চিত্তে বাংলার দামাল ছেলে,
আরো আছে কত শ্রমিক, যুবক, নারী, কৃষক ও জেলে.
অবশেষে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলো সরকার,
বাঙালিরা পেল মাতৃভাষার সোনালী দিবাকর.
রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আজ কাঙ্খিত মাতৃভাষা,
একুশ তুমি চির অমর তুমি আমাদের ভালবাসা…
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গান ২০২৩
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আপনি যদি শহীদ দিবসের গান অনলাইন অনুসন্ধান করেন তাহলে এখান থেকে কিছু গান শুনবো করে নিতে পারেন। আমরা শহীদ দিবসের কিছু গান এই নিবন্ধ যুক্ত করেছি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা
২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা ২০২৩
ভূমিকা : বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক অনন্য চেতনাদীপ্ত অধ্যায় হলাে একুশে ফেব্রুয়ারি । কেননা মাতৃভাষার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে এ দিন বাংলার দুর্জয় সন্তানরা রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করেছিল পিচঢালা কালাে রাজপথ । এই ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে বিশ্ব দরবারে উচ্চতর মর্যাদা ও নবতর পরিচিতি দান করেছে। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগ স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। ইতিহাসের পাতায় । তাঁদের আত্মােৎসর্গেই আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে পেয়েছি। আমাদের জাতীয় জীবনে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । ভাষা শহিদদের উদ্দেশ্যে এ দিনকে স্মরণ করে আমরা তাই গেয়ে উঠি—
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে।
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?
একুশে ফেব্রুয়ারির পটভূমি : ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সফল গণঅভ্যুত্থান এবং শাসকচক্রের বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে এবং এটি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাভাষীরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ । তবুও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলার দাবি বারবার উপেক্ষিত হতে থাকে। ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ঘােষণা দেন : ‘Urdu only, and Urdu shall be the state language of Pakistan.’ এরপর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময়ও তিনি একমাত্র উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করেন।
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলি জিন্নাহর ঘােষণার তীব্র প্রতিবাদ করে। না না ধ্বনিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠান প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিরােধ এবং শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন সৃষ্টির জন্য তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে প্রথম রাষ্ট্রভাষা। সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রতিবাদ দিবস এবং ৩১ জানুয়ারি ঢাকার সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল । ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলার অকুতােভয় সংগ্রামী জনগণ ও ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করে। ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলটি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মুখে গিয়ে পৌঁছায় তখনই। ঘাতক পুলিশ নির্বিচারে মিছিলটির ওপর গুলিবর্ষণ করে। সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বারসহ আরও অনেক তরুণ-প্রাণ। অকালেই ঝরে যায়। পুলিশের বর্বরােচিত নৃশংসতার প্রতিবাদে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাজপথে নেমে আসে। অবস্থা। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে অবশেষে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
প্রথম শহিদ মিনার : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং রাতের মধ্যেই তা শেষ করা হয় । ২৪ ফেব্রুয়ারি শহিদ শফিউর রহমানের পিতাকে এনে মিনার উদ্বোধন করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুনরায় এই মিনার উদ্বোধন করেন সদ্য পদত্যাগকারী সংসদ (তৎকালীন এসেম্বলি) সদস্য ও দৈনিক আজাদের সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন । ঐ দিনই পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিনারটি নিশ্চিহ্ন করে দেয় । ১৯৫৬ সালে পুনরায় শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় । ১৯৫৬ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ৫২’র শহিদ আউয়াল নামক এক রিকশাচালকের ৬ বছরের মেয়ে বসিরন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আবুল হােসেন সরকার শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালেই প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ঘােষণা করা হয় । যথাযােগ্য মর্যাদার সঙ্গে সরকার শােক দিবসটি যথাযথভাবে উদ্যাপন করেন ।
একুশের চেতনায় স্বাধীনতার মূলমন্ত্র : একুশের ভাষা আন্দোলন বাঙালির মাতৃভাষা ভিত্তিক সাংস্কৃতিক লড়াই হলেও এর মধ্যেই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র নিহিত ছিল । অকুতােভয় সংগ্রামী বাঙালির এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রথম সফল সংগ্রাম ছিল এ ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের সাহস পায় । বাঙালির আত্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পায় এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে সােচ্চার হয়ে ওঠে। তাই পরবর্তীকালে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় । ফলে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি । তাই বলা যায়, বাঙালির স্বাধীনতার মূলসূত্র একুশের ভাষা আন্দোলনের মাঝেই নিহিত ছিল। এর পথ ধরেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আমাদের সকল আন্দোলনের মূল উৎস হিসেবে ভাষা আন্দোলনকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ : ১৯৫৩ সাল থেকে এদেশের মানুষ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে । ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো এ দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা দেয়। সেই থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর বহু দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। আর ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং বিশ্বের ১২৪টি দেশ তা সমর্থন করে। এই ঘােষণার মধ্যদিয়ে ইউনেস্কোর ওই ঘােষণা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল । আজ বাঙালির একুশ যে বিশ্বজনীন দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে— এ গৌরব ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী থেকে শুরু করে প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রগতিপন্থি বাঙালির । ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)-এর সাধারণ পরিষদ তার ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থনে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর পর থেকে প্রতি বছর উক্ত সংস্থার ১৮৮টি সদস্য দেশ এবং সংস্থাটির সদর দপ্তরে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে ।
জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা : আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একুশের চেতনার উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ করা যায় । বাঙালি জাতির মন-মানসে একুশ নব সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটায় । আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিতে একুশের যথেষ্ট প্রভাব। রয়েছে । বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় একুশের পদচারণা দেখা যায় । কবি-সাহিত্যিকগণ একুশকে উপজীব্য করে রচনা করেছেন। অসংখ্য সাহিত্যকর্ম । আমাদের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ প্রশংসিত ও সম্মানিত । সারা বিশ্বে এ দিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৫ হাজার ভাষা বিশেষভাবে সম্মানিত হয় । বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হকের মতে, একুশে ফেব্রুয়ারি কোনাে বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তিথি নয়, একটি জাতির। জীবন্ত ইতিহাস। এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করেই আমাদের অন্যান্য সকল আন্দোলন বিকশিত হয়েছে। আমাদের জাতায় জীবনে একুশ দান। করেছে নব প্রেরণা। বাংলা শিল্প-সাহিত্যের ধমনিতে নিত্য সক্রিয় রয়েছে একশের চেতনা। মুনীর চৌধুরী রাত নাটক কবর, মাহবুব উল-আলম রচিত কবিতা কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’; জহির রায়হান রচিত ‘আরেক ফাল্গুন’ এসব কালজয়ী সাহিত্যকর্মের সবগুলােই একুশের অবদানে পুষ্ট । কেবল সাহিত্যেই নয়, সকল ক্ষেত্রেই একুশে ফেব্রুয়ারির আলাদা তাৎপর্য রয়েছে । ১৯৫৩ সালে শহিদ দিবস উদযাপন করতে গিয়ে তৎকালীন প্রগতিশীল কর্মীরা যেসব কর্মসূচি পালন করেছিলেন সেগুলাে এখন আমরাও অনুসরণ করছি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়া, সমবেত কণ্ঠে একুশের গান গাওয়া, শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা ইত্যাদি। বাংলা একাডেমির ফেব্রুয়ারি মাসে পুরাে এক মাসব্যাপী বই মেলার আয়ােজন করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। অর্থাৎ দেখা যায়, আমাদের জাতীয় জীবনের বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা। তাইতাে নাগরিক কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ কবিতায় দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন—
তােমাকে উপড়ে নিলে, বলাে তবে কী থাকে আমার?
উনিশ শাে বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুস্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছাে সগৌরবে মহীয়সী ।
উপসংহার : একুশ আমাদের কণ্ঠে ভাষা দিয়েছে, হৃদয়ে দিয়েছে আবেগ, চেতনায় জাগিয়েছে দৃঢ়তা। একুশ আমাদের মুক্তির চেতনায় উদ্দীপ্ত করেছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহিদরা যে অবদান রেখেছেন তাকে অম্লান রাখতে হবে । আর এ উদ্দেশ্যে বর্তমান প্রজন্মকে যথাযথভাবে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে । আমাদের মুক্তি চেতনার উৎস ও বাহক একুশকে তার যথাযথ সম্মান প্রদান করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।